বিশাল চরে নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কৃষকরা

top Banner

ইফতেখার ইসলাম
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পশ্চিম সমুদ্র উপকূলের কাছে বিশাল চরাঞ্চল। যেখানে শত শত একর জমিতে প্রতিবছরই উৎপাদিত হয় ধান, ডালসহ বিভিন্ন ফসল। ফসল উৎপাদনের কাজে দিনের প্রায় সিংহভাগ কৃষকদের অবস্থান করতে হয় চরাঞ্চলে। তবে এই সময়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পানি প্রতিদিন তাদের বহন করে নিয়ে যেতে হয়। আর পানি ফুরালে পড়তে হয় বিপদে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ পান করেন খালের অনিরাপদ পানি। এতে যেমন কৃষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা তৈরি হয়েছে ঠিক আবার পানি বহনে অতিরিক্ত খাটুনিও করতে হয়। আর তাই এই অঞ্চলে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদর থেকে বেশ কয়েক মাইল দূরে পশ্চিম মিঠানালা, সুফিয়া বাজার, মলিয়াইশের পশ্চিম দিকে জনবসতির বাইরে বিশাল সবুজ মাঠ। চতুর্দিকে বিস্তৃত ধূ ধূ এই মাঠ সবুজ ঘাস আর শস্যেভরা। একেবারে পশ্চিমে সমুদ্র উপকূলে গড়ে উঠছে দেশের বৃহত্তম শিল্প নগর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর’। যেখানে হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে। উপজেলা শহর থেকে অদূরে সমুদ্র উপকূলে বিশাল এলাকাজুড়ে উন্নয়নের মহোৎসব শুরু হলেও এর মাঝখানে অবস্থিত বামনসুন্দর চর হিসেবে পরিচিত এই চরাঞ্চলে নেই কোন নিরাপদ পানির ব্যবস্থা।
জানা গেছে, ফসল উৎপাদনের কাজে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা এই চরাঞ্চলে যান। কেউ কেউ আবার বিশাল এই ভূমিতে লালন পালন করেন গবাদিপশু । আর এসব কাজের জন্য প্রতিনিয়ত তাদের থাকতে হয় চর এলাকায়। খাবারের পাশাপাশি প্রতিদিন কৃষকদের কাঁধে বহন করে নিয়ে যেতে হয় পানি। দুপুরের প্রখর রোদে তৃষ্ণাত্ব হয়ে কৃষকদের পান করতে হয় অতিরিক্ত পানি। যার ফলে বহন করে নিয়ে যাওয়া পানি তাদের জন্য পর্যাপ্ত হয় না। আর এমন পরিস্থিতিতে তাদের বাধ্য হয়ে খালের অনিরাপদ ও গন্ধযুক্ত পানি পান করতে হয়। তাছাড়া কেউ কেউ ফসল ও পশু পাহারা দিতে দিনের পর দিন খামারে অবস্থান করেন। সেইসময় লোকালয় থেকে পানি বহন করা সম্ভব হয় না দেখে তাদের পান করতে হয় খালের ওই অনিরাপদ পানি।
যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে: নিরাপদ পানির সংকটে পড়ে কৃষকদের পান করতে হয় খালের অস্বাস্থ্যকর পানি। যেখানে প্রায়ই ফেলা হয় মরা জীবজন্তু, গবাদিপশুর মল। এছাড়া লোকালয়ের বাজরগুলো থেকে প্রতিনিয়ত পঁচা সবজি, মাছ, মরা মুরগি ও শিল্প কারখানার বর্জ্য ফেলা হয়, যা বড় খালগুলো দিয়ে বয়ে গিয়ে চরের ছোট খালের পানিতে মিশে যায়। যে খালের পানি কৃষকরা পান করেন। আর দূষিত পানি পানের কারণে মানুষ ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা জটিল ও প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন চর্মরোগে ভুগারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
প্রয়োজন বৃহত্তর উদ্যেগ: বছরের পর বছরজুড়ে এই চরাঞ্চলে নিরাপদ পানির সংকট থাকায় কৃষকরা নিজ উদ্যেগে বেশ কয়েকবার টিউবওয়েল স্থাপন করেছিলেন। তবে টিউবওয়েল স্থাপনের অল্প কিছুদের মধ্যে এটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। পানিতে অতিরিক্ত লবন, আয়রন কিংবা পানি না উঠাসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে স্থানীয়দের এসব উদ্যেগ আলোরমুখ দেখে নি। ফলে পানি সংকট দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর সংশ্লিষ্টরা বলছেন এই সমস্যা সমাধানে বৃহত্তর উদ্যেগ প্রয়োজন।
যা বলছেন স্থানীয় ও কৃষকরা: প্রতিনিয়ত পানির এই সংকট মোকাবেলা করেই জীবনযাপন করছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, নিরাপদ পানি না পেয়ে খালের পানি পান করতে হয় তাদের। আগে পানি দেখতে স্বচ্ছ মনে হলেও এখন নগরায়নের ফলে বর্জ্য বেড়ে গেছে যার ফলে পানি পান করতেও আগ্রহ জন্মায় না। তবে চরাঞ্চল বিশাল হওয়ার সেখানে পুরো জায়গাজুড়ে নিরাপদ পানির আওতায় নিয়ে আসা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ হলেও স্বল্প সংখ্যা স্থানে টিপ টিউবওয়েল বসিয়ে এই সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অনেক স্থানীয় ব্যক্তি।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম নামে এক চাষী বলেন, “আমাদের প্রতিদিন হাল-চাষের কাজে চরে থাকতে হয়। বাড়ি থেকে যে পানি নিয়ে যাই তা অনেক সময় পর্যাপ্ত হয় না। এমন পরিস্থিতিতে খালের পানি পান করতে হয়। যদি সরকার বা বড় কারো উদ্যেগে এখানে কিছু ডিপ-টিউবয়েল স্থাপন করা যায় তাহলে কৃষকদের জন্য উপকার হবে।
জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলার ১০ নম্বর মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চলমান মিরসরাইকে বলেন, “চরের এলাকায় সেচ বা সুপেয় পানির জন্য ডিপ টিউবওয়েল দরকার রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে আর্থিক ও অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। আমরা সকল দিক বিবেচনা করে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। “
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, “বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত ছিলাম না। যেহেতু চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপদ পানির সংকটে ভুগছেন তাহলে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা পরিষদ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। যদি সেখানে ডিপ টিউবওয়েলের দরকার হয় তাহলে আমরা তা স্থাপন করবো।”

আরো খবর