পর্যটনে নতুন দিগন্ত

top Banner

মিরসরাই উপজেলা ধীরে ধীরে পর্যটন শিল্পে সমৃদ্ধ হচ্ছে। উপজেলাজুড়ে বাড়ছে পর্যটকের আনাগোনা। পাহাড়, অরণ্য, সাগর, নদী, হ্রদ, পার্ক, ইকোপার্ক সমানতালে টানছে পর্যটক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিত্য অগণিত পর্যটক ছুটে আসছে এ পর্যটন উপজেলাতে। অদৃশ্য মায়ার হাতছানি দেয়া ডাক অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা নেই প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুদের।

এদিকে বিশেষ কোন দিবস কিংবা লম্বা কোন ছুটিছাটা উপলক্ষ্যে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে সমগ্র উপজেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। এসময় পর্যটকের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর। বছরজুড়েই পর্যটকের বাড়তি চাপ লক্ষ্য করা যায় মহামায়া ইকো পার্ক ও ঝর্ণার রাণী হিসেবে খ্যাত খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। সম্প্রতি মুহুরী প্রজেক্টেও দেখা যাচ্ছে চোখে পড়ার মতো পর্যটক। এরই মধ্যে পারিবারিক আনন্দভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে আরশিনগর ফিউচার পার্ক। শিশু ও তরুণ তরুণীদের জন্য উপযোগী করে তৈরী করা হয়েছে এ পার্কটিকে। ঝর্ণা প্রেমীদের প্রথম চয়েস খৈয়াছড়া ঝর্ণা হলেও তা দেখার পর সেসব পর্যটক ছুটে বাকী ঝর্ণাগুলো দেখার লোভ সামলাতে পারেন না। ছুটে যান মহামায়া ঝর্ণা, রূপসী ঝর্ণা ও নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা দেখতে।


এদিকে পাহাড়ের সৌন্দর্য্যকে ছাপিয়ে আরো এককাঠি সরস সমুদ্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মেরিন ড্রাইভ খ্যাত সুপার ডাইকের কারণে সৃষ্টি হয়েছে দৃষ্টি নন্দন সমুদ্র সৈকত। যার আকার, আয়তন ও সৌন্দর্য্য দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক খরচেই পর্যটকরা দেখার সুযোগা পাচ্ছে পাহাড় ও সমুদ্র। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি শিকার। ‘রথ দেখা ও কলা বেচা’র মতোই পাহাড় দেখতে এসে দেশের দূর দূরান্তের পর্যটকরা বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন সমুদ্রতীরে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ। মিরসাইয়ের সমগ্র উপজেলা জুড়েই সৈকত থাকলেও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে সাহেরখালী (ডোমখালী) সমুদ্র সৈকত ও মিরসরাই ইকোনোমিক জোন সৈকত।

মিরসরাই উপজেলা পর্যটনের জন্য পরিচিতি পেতে থাকে মহামায়া ইকো পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে। পাহাড়ের পানি আটকে চাষাবাদের জন্য কৃত্রিম লেক তৈরী করা হলে ধীরে ধীরে তা নজর কাড়ে পর্যটকদের। সেসময় রাবার ড্যাম দেখতে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটক ছুটে আসতে থাকে। লেকের জলে বাড়তে থাকে ডিঙি নৌকার সারি। সেসব ডিঙি নৌকায় পর্যটকরা চষে বেড়াতে থাকেন সমগ্র লেক। লেক ভ্রমণে নতুন মাত্রা যোগ করে কায়াকিং। পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ দেখে বন বিভাগ এ সেচ প্রকল্পকে ইকো পার্ক হিসেবে ঘোষনা দেয়। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ সেচ প্রকল্পের আয়তন বর্তমানে সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এবারকার দুর্গাপুজার দীর্ঘ ছুটিতে মহামায়ায় বেড়েছে ব্যস্ততা। পর্যটকের বাসের জায়গা হচ্ছেনা মহামায়ার নির্ধারিত পার্কিং এ। বেড়েছে স্থায়ী অস্থায়ী দোকানপাট। সেসমস্ত দোকানে চলছে জমজমাট বেচাকেনা। তবে পর্যটকদের অভিযোগÑ সুযোগ বুঝে সকল পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন অসাধু ব্যাবসায়ীরা। তবে বাড়তি দামেও ভাটা পড়েনি পণ্যের কাটতিতে। ভেতরকার অবস্থা আরো বেশি চাঞ্চল্যকর। পর্যটকের ভিড় এতটাই বেশি যে গায়ের সাথে গা ঘেঁসে চলতে হচ্ছে। মহামায়ার প্রধান আকর্ষণ হলো বোটে চড়ে লেক ভ্রমণ ও কায়াকিং। কিন্তু হঠাৎ করে পর্যটক বাড়ায় সংকট দেখা দিয়েছে বোট ও কায়াক নৌকার।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো: সবুজ নামের এক পর্যটক বলেন, মহামায়ার কথা ইউটিউব ব্লগে দেখে দেখতে এসেছি। বাস্তবে এটা আরো বেশি সুন্দর। তবে আমরা বোটের জন্য ১ ঘন্টা অপেক্ষা করছি। বোট পাচ্ছিনা। বোট তীরে আসা মাত্রই মানুষ যেন ঝাপিয়ে উঠে যাচ্ছে। দরদামও করছে না।

খৈয়াছড়া ঝর্ণার চিত্রও ভিন্ন নয়। অন্য সময়ের চেয়ে বাড়তি পর্যটক ভিড় জমাতে দেখা যায় সেখানে। পর্যটক ঘিরে সেখানেও চলছে বাণিজ্য। প্রতি টিকেট ২০ টাকা। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে গাইড। নির্দিষ্ট পেমেন্টের বিনিময়ে চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তারা ঝর্ণা পর্যন্ত নিয়ে যায় পর্যটকদের। এর বাইরে চলে দুপুরের খাবার বাণিজ্য। ঝর্ণা এলাকার অনেকগুলো পরিবারকে দেখা যায় পর্যটকদের থেকে অগ্রিম টাকা নিচ্ছে দুপুরের খাবারের জন্য। ঘরোয়া পরিবেশে যারা খেতে পছন্দ করেন তারা পরিবার গুলোকে বাজার করার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং দিচ্ছেন। কেউ কেউ পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছেন বাঁশের লগি বা কঞ্চি। যা দিয়ে পিচ্ছিল পথে পর্যটকরা ভারসাম্য রক্ষা করে পা ফেলতে পারে।

ঝর্ণায় আসা এক দম্পতি বলেন, খৈয়াছড়া ঝর্ণা অনেক সুন্দর। যে কেউ এ ঝর্ণার প্রেমে পড়তে বাধ্য। তবে আমরা হতাশ হয়েছি এর ব্যবস্থাপনা দেখে। এখানে টিকেট কেটে ঝর্ণা দেখতে হয়। কিন্তু পর্যটকদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই। নেই তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঝর্ণায় আসার রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ। এত বেশি কাদা যে জুতা খুলে হাঁটতে হয়।

পর্যটকে গিজগিজ করছে ডোমখালী সমুদ্র সৈকতও। উপজেলার ভ্রমনপিপাসু মানুষরা নিত্য ভিড় জমাচ্ছেন এ সৈকতে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামার সাথে সাথে বাড়তে থাকে পর্যটকদের ¯্রােত। সাগরের গর্জন দূর থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকে সমুদ্রপ্রেমীদের। সৈকতের বালিতে পা রাখলে কেটে যায় পথের ক্লান্তি। দখিনা মিষ্টি হাওয়ায় শীতল হয়ে যায় শরীর ও মন। দেখতে অনেকটা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের এর মতো হওয়ায় প্রতিদিন শতশত পর্যটক পাড়ি জমায় ডোমখালী সমুদ্র সৈকতে। সৈকতের অনাবিল সৌন্দর্য্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ। সৈকতের ভেজা মাটিতে ছোট ছোট গর্তে মুখ তুলে থাকে কাঁকড়াগুলো। মানুষের আভাস পেলেই হুট করে লুকিয়ে পড়ে গর্তে। এসব দৃশ্য মন কেড়ে নেয় পর্যটকদের।

আরো খবর