কোরবানীকে ঘিরে ৪৫ হাজার পশু প্রস্তুত

top Banner

এম মাঈন উদ্দিন

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা কোবানীকে ঘিরে মিরসরাই উপজেলায় ৪৫ হাজার পশু প্রস্তুত করছেন খামারিরা। উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের উপজেলাগুওলোতে পাঠানো যাবে পশু। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় অবস্থিত ছোট বড় ২৬৬ খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজারের চেয়ে খামারে ক্রয় বিক্রয়কে গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতা, বিক্রেতা উভয়ে। উপজেলায় কোরবানীতে ২৮ থেকে ৩০ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। পশু প্রস্তুত রয়েছে ৪৫ হাজার।

জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন। দেশে গত দুই বছর ভারত থেকে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিল। তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা। তবে এ বছরও ভারতীয় গরু না আসলে বেশ লাভবান হবে এমনটাই আশা করছেন তারা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও গবাদিপশু লালনপালনকারীরা ভালো দামের প্রত্যাশায় রয়েছেন।

জানা যায়, মিরসরাই উপজেলায় স্থায়ীও অস্থায়ী মোট ২৬ টি হাটে গবাদিপশু বেচাকেনা হয়। এবারও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট বসানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ২৬ টি হাটের মধ্যে উপজেলার মিরসরাই বাজার, বড়তাকিয়া, মিঠাছরা, জোরারগঞ্জ, বারইয়ারহাট, আবুতোরাব গরুরবাজারগুলো বড়। এসব বাজারে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু ক্রয় করে ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রয় করে। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে।

বর্তমানে এ উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এ পেশায় রয়েছে। খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি দুইটি করে গরু মোটাতাজা করে। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটি গরু ৪৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রয় করেন এখানকার গবাদিপশুর খামারি ও কৃষকরা। উপজেলায় ৫০ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৫০ ভাগ করছে সাধারণ কৃষকরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য মতে, মিরসরাই উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ২৬৬ টি খামার রয়েছে। এবার এসব খামারে ৪৫ হাজার ষাড়, বলদ, গাভী, মহিষ, ছাগল, ভেড়া হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় গরুর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলায় রেড় চিটাগাং গরু সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা করা হয়। এছাড়া শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও দেশী গরুও মোটাতাজা করা হয়।

জানা গেছে, এবারও কোরবানীর জন্য সবচেয়ে বেশি কোরবানীর গরু প্রস্তুত রয়েছে নাহার ডেইরী ফার্মে। এবার প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ৪৫০ গরুর কোরাবানীর জন্য মোটাতাজা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে গরু বেচাকেনা করছেন।

নাহার এগ্রো গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, অমরা নিজস্ব ফার্মে জন্ম নেয়া হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুগুলোকে নিয়মমাফিক নেফিয়ার ঘাস ছাড়াও পুষ্টিকর কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ক্যাটেল ফিড খাওয়ানো হয়। আমাদের গরুগুলোকে প্রাণঘাতী স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো হয় না। গরুগুলো হয় রোগমুক্ত, স্বাস্থ্যবান ও প্রাণবন্ত। মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের নলখো, ঘেড়ামারায় ও চট্টগ্রামের বায়েজীদ লিংক রোডস্থ আরেফিন নগর( সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর নিকটে) অবস্থিত নাহার ডেইরী ফার্মে গরু রয়েছে । এছাড়া সারা বছর এই প্রতিষ্ঠানে গরু বিক্রি করা হয়।

উপজেলার ডোমখালীতে অবস্থিত আরবিসি এগ্রো প্রকল্পের স্বত্বাধিকারী শাহীদুল ইসলাম বলেন, উনার খামারে প্রায় ১৫০টি গরু রয়েছে। এবার কোরবানীর জন্য প্রস্তুত করেছেন ৫০টি গরু। তাঁর খামারে ২ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গরু রয়েছে। ক্রেতারা খামারে গিয়ে গরু পছন্দ করে ক্রয় করতে পারবে।

মিরসরাই উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, প্রায় দেড় বছর যাবত দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ও পশুপালনে নিয়োজিত হয়েছেন। প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ, করোনাকালীন প্রনোদনা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। যার কারণে এবার ফেনীতে কোরবানীর চাহিদার থেকে বেশি পশু প্রস্তুত হয়েছে। ভারতীয় গুরু আমদানী বন্ধ রাখতে পারলে কৃষক ও খামারীরা ন্যায্য মূল্যে কোরবানী পশু সরবরাহ করতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, উপজেলায় ক্ষতিকর স্টেরয়েড হরমোন জাতীয় ঔষুধ ব্যবহারকৃত গবাদিপশু নেই বলে আমার বিশ্বাস। মিরসরাইয়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে দেশী মাঝারি আকারের গরুর। উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকে নিরাপদ গো মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা খামারীদের দীর্ঘদিন ধরে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং মনিটরিং কার্যক্রমও জোরদার করেছি। ফলে আশানুরূপ ফল এসেছে। গত বছরের মত এবারও বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নজরদারি করবে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তর।

আরো খবর