রাইচ মিল দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যাচ্ছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী

top Banner
  • রাজু কুমার দে

অবশেষে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের মুখ দেখল মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী। একের পর এক বাধা পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে দেশের ৭৫তম বিসিক শিল্পনগরীটি। সম্প্রতি ‘এয়াকুব আলী অটো রাইস মিল’র মাধ্যমে বিসিক শিল্পনগরীটি বাণিজ্যিক উৎপাদন যাত্রা শুরু করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিসিক চট্টগ্রামের উপব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন। সব কয়টি কারখানা চালু হলে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্লটের চাহিদা বেড়ে যাওয়া নতুন করে জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করছে বিসিক।


বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ দশমিক ৩২ একর জমির উপর নির্মিত মিরসরাই বিসিক শিল্প নগরীতে ব্যয় হয় ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। কাজ শেষ হওয়ার ২ বছর পর বরাদ্দের জন্য ৮৮টি প্লটের বিপরীতে ১১৪টি আবেদনপত্র জমা পড়ে। যাচাই বাছাই শেষে ৮৮টি শিল্পোদ্যোক্তাকে প্লট বরাদ্দ দেয় বিসিক চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি। কিন্তু ১৪টি শিল্পোদ্যোক্তা সময় মত অর্থ পরিশোধ করতে না পাড়ায় প্লটগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে ১৪টি প্লটের বিপরীতে ৫৬টি আবেদন জমা পড়ে। ৫ বছরের মধ্যে নয়টি কিস্তিতে প্লটের টাকা পরিশোধ করতে পারবেন শিল্পোদ্যোক্তারা। প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এই শিল্পনগরীকে ঘিরে শিল্পোদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেশি দেখা দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্লট বরাদ্দ কমিটি অনেক যাচাই বাছাই করে প্লট বরাদ্দ দিচ্ছেন।


বিসিক সূত্রে আরো জানা গেছে, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে এ-টাইপ প্লট-২৭টি, বি-টাইপ প্লট-৩৩টি ও সি-টাইপ প্লট-২৭টি। প্লট বরাদ্দ কমিটি প্রকৌশলি খাতে ১৯টি, তৈরি পোশাক খাতে ১৬টি, খাদ্য ও খাদ্যজাত খাতে-১৯টি, ক্যামিকেল এন্ড অ্যালাইড খাতে ১০টি, বন ও বনজাত খাতে ৩টি, প্যাকেজিং খাতে ৮টি, সিরামিকস ও নন মেটালিক-৩টি, রাবার-লেদার এন্ড অ্যালাইড খাতে-৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে পণ্য উৎপাদনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীকে। প্লট গ্রহীতা চাইলে এখনি বিদ্যুৎ সংযোগসহ সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।


এদিকে গত বছরে পরীক্ষামূলক ভাবে ৩টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করলেও বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যেতে পারেনি কোনটি। অবশেষে ‘এয়াকুব আলী অটো রাইস মিল‘র মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করে দেশের অন্যতম এই বিসিক শিল্পনগরী।


এবিষয়ে জানতে চাইলে ‘এয়াকুব আলী অটো রাইস মিল‘ মালিক পক্ষে একজন মো. সাহাব উদ্দিন মিয়া জানান, ধানের সরবরাহ অনুযায়ি তারা দৈনিক ৪০ টন আতপ চাল উৎপাদন করছেন। ৯হাজার স্কয়ার ফিটের দুইটি কারখানায় বর্তমানে ১২ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে জায়গা কম হওয়ায় তারা ব্যাপক ভাবে উৎপাদনে যেতে পারছে না।


এবিষয়ে বিসিক চট্টগ্রামের উপ-ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন জানান, মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। তাই এটির চাহিদা বেশি। সম্প্রতি ‘এয়াকুব আলী অটো রাইস মিল’এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। ৬টি প্রতিষ্ঠান নতুন করে কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। শীঘ্রই আরো কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনে যাবে। চাহিদা বেশি হওয়ায় নতুন করে জমি অধিগ্রহণের চিন্তা করা হচ্ছে।


উল্লেখ্যঃ ২০০৯ সালে মিরসরাইয়ে একটি বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১০ সালে মিরসরাইয়ের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু মাটি ভরাটসহ নানা জটিলতায় আটকে যায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের কাজ। এরি মধ্যে একাধিকবার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়। বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের সময়সীমাও। ২০১৫ সালের ১২ মে জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প আকারে ২৯ কোটি ২৫ লাখ টাকার মিরসরাই বিসিক প্রকল্প অনুমোদন হয়। কিন্তু ব্যয় ও সময়সীমা বাড়িয়ে নিদিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

আরো খবর