রাত পোহালেই মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হবে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও এবারের ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তুমুল প্রতিন্ধন্ধিতায়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়েছেন ১২ জন প্রার্থী। যার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন ৩ জন প্রার্থী।
ভোটের সমীকরণ বলছে, চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্ধন্ধি থাকলেও মূল প্রতিদ্ধন্ধিতা হবে কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন ও ঘোড়া প্রতিকের প্রার্থী শেখ আতাউর রহমানেরর মধ্যে। এ দুই শক্ত প্রার্থীর ভোটযুদ্ধের বাইরে ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস হোসেন আরিফের। ত্যাগী নেতা খ্যাত আরিফের নির্বাচনী প্রতীক আনারস। এছাড়াও উত্তম কুমার শর্মা (দোয়াত কলম) ও মো. মোস্তফা (মোটর সাইকেল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাইফুল ইসলাম (চশমা), শেখ সেলিম (টিয়া পাখি), সালাহ উদ্দিন আহমেদ (টিউবঅয়েল), সাইফুল আলম (তালা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত আরা ফেন্সি (কলস), উম্মে কুলসুম কলি (ফুটবল), বিবি কুলছুম (পদ্মফুল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ঘিরে কাপ পিরিচ ও ঘোড়া প্রতীকের সমর্থনে প্রকাশ্যে আসেন আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীরা। দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থনের দৌড়ে কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়নকে এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। জনগণের একনিষ্ঠ সমর্থন পেয়ে নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদও ব্যাক্ত করেন এ প্রার্থী। অপরদিকে দলের নেতাকর্মীদের আশানুরুপ সমর্থন না পেয়ে নির্বাচনে প্রশাসনের সহয়তা চেয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান।
কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমি নির্বাচিত হলে মিরসরাইয়ের সাংসদ মাহবুব উর রহমান রুহেল-এর উন্নয়ন কাজকে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন, তরুণ যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, পরিবেশ রক্ষাসহ যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। মিরসরাইয়ে নির্বাচনি পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। আগামী ৮মে নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটে আমি বিজয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে দলের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যক্তি উদ্যোগে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার বা সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে না তাই নির্বাচনে সকল প্রার্থীর সমান অধিকার রয়েছে। ভোটের দিন ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
আনারস প্রতীকের প্রার্থী ফেরদৌস হোসেন আরিফ বলেন, মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতিতে আমার ও আমার পরিবারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আমি দলীয় রাজনীতিতে কখনো ব্যক্তিগত গ্রুপ বা বলয় সৃষ্টি করিনি। অবৈধ উপার্জন করিনি। বিগত সময়ে আমি নিষ্ঠার সাথে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছি। আমার যোগ্যতা বিবেচনা নিয়ে ভোটাররা আমাকে সমর্থন করবেন বলে আমার বিশ্বাস।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারি রির্টানিং অফিসার জাকির হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৮ তারিখ সকাল ৮টায় যথানিয়মে ভোটগ্রহণ শুরু হবে। নির্বাচন অবাধ নিরপেক্ষ করতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ১৮জন,জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১জন বিজিবি ৩ প্লাটুন,র্যাব -২ টিম, পুলিশ স্ট্রাইকিং টিম- ১০টি,পুলিশ মোবাইল টিম- ১৯টি,ব্যাটালিয়ন আনসার- ২ সেকশন, কেন্দ্র প্রতি পুলিশ ফোর্স- ৩/৪/৫ জন ( গুরুত্বানুসারে), আনসার- কেন্দ্র প্রতি ১২ জন দায়িত্ব পালন করবেন।
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণকে অবাধ ও নিরপেক্ষ রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন। তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দর হয় সেই লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। ১১৩টি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের মাঝে নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দকৃত সামগ্রী বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভার ১১৩ কেন্দ্রে ৮৩৮টি ভোট কক্ষে ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এখানে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯২ হাজার ৭২০ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৫ জন ও হিজড়া ভোটার ২ জন রয়েছেন।