মিরসরাই উপজেলার ৩৩ টি সরকাারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দেড়শ সহকারি শিক্ষক ১৩ তম গ্রেডের বকেয়া পাওনা টাকা বুঝে পায়নি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৩ জুন ছিলো শিক্ষকদের পাওনা টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার শেষ সময়।
উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নে শিক্ষকদের ব্যাংক হিসাবে তাদের পাওনা জমা হলেও সরকারহাট ক্লাস্টারের অধীন ওয়াহেদপুর, হাইতকান্দি ও সাহেরখালী ইউনিয়নের প্রায় ১৫০ জন সহকারি শিক্ষক এ টাকা বুঝে পাননি।
সরকার ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩ তম করার সিদ্ধান্ত নেয়। বেতন গ্রেড-১৪ (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) এবং বেতন গ্রেড-১৫ (প্রশিক্ষণ বিহীন) থেকে গ্রেড-১৩তে উন্নীত করা হয়। সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে ১০ হাজার ২শত’ টাকা স্কেলে বেতন পেতেন। ১৩তম গ্রেডে ১১ হাজার টাকার বেতন স্কেলে উন্নীত করা হয়।
ওয়াহেদপুর, হাইতকান্দি ও সাহেরখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, মিরসরাইয়ের অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বকেয়া পাওনা বুঝে পেলেও তারা পাননি। এ বিষয়ে বিভিন্ন মারফতে সোনালী ব্যাংক নিজামপুর শাখা এবং শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তারা টাকা পাবেন কিনা এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা।
শিক্ষকরা জানান, নিদিৃষ্ট সময়ের মধ্যে পাওনা টাকা পরিশোধ না করা দু:খজনক। কি কারণে উপজেলা শিক্ষা অফিস আমাদের পাওনা দিতে ব্যর্থ হয়েছে আমরা জানিনা। এখন শিক্ষকদের পাওনা টাকার দায় কে নেবে?
গত ২৬ মে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ( অর্থ-রাজস্ব) মো: নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বিভাগ, জেলা এবং উপজেলার হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কাছে প্রেরণ করে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বরাদ্দকৃত অর্থ হতে শিক্ষকবৃন্দের উন্নীতস্কেলের (১৩তম গ্রেড) বকেয়া পরিশোধ করা যাবে। ইতোমধ্যে যাদের ১৩ তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ সম্পন্ন হয়েছে, তাদের প্রাপ্য বকেয়া ২৩ জুন ২০২২ তারিখের মধ্যে আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্ট আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন। অব্যয়িত অর্থ ২৪ জুন, ২০২২ এর মধ্যে সমর্পণ করতে হবে।
চিঠিতে ২৩ জুনের মধ্যে বকেয়া পাওনা পরিশোদের কথা থাকলেও মিরসরাই উপজেলার নিজামপুর সোনালী ব্যাংকের আওতাধীন শিক্ষকরা বকেয়া পাওনা বুঝে পায়নি। বকেয়া পাওনা আদৌ পাবেন কিনা এ নিয়ে সংশয়ে আছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা হচ্ছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একই উপজেলায় কেউ বকেয়া পাওনা পাবে আবার অন্যরা পাবেনা এটি কেমন নিয়ম? কার অবহেলায় শিক্ষকরা তাদের পাওনা টাকা পেতে এমন জটিলতা তৈরী হয়েছে সেটি চিহ্নিত হওয়া দরকার। ব্যাংক, শিক্ষক সমিতির নেতা, শিক্ষা অফিস কারো কাছে যেন এর কোন উত্তর নেই।
সরকারহাট ক্লাস্টারের অধীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সোনালী ব্যাংকের নিজামপুর শাখায় প্রদান করা হয়। এই ক্লাস্টারের ক্লাস্টার অফিসার হিসেবে দায়িত্বে আছেন মিরসরাই উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো: ফারুক হোসেন।
ফারুক হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানিনা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার এই বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
সোনালী ব্যাংক নিজামপুর শাখার ম্যানেজার মো: সবুজ আলম বলেন, এই শাখায় যেসব সহকারী শিক্ষকের হিসাব রয়েছে তাদের কারো হিসাবে ১৩ তম গ্রেডের বকেয়া পাওনা জমা হয়নি। সহকারি শিক্ষকরা তাাদের ব্যাংক হিসাবে বকেয়া টাকা জমা হয়েছেন কিনা খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
মিরসরাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার একেএম ফজলুল হক বলেন, কিছু করনিক ভুলের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের বকেয়া পাওনা প্রদান করা সম্ভব হয়নি। বকেয়া বেতন প্রদানের প্রক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই শিক্ষকরা তাদের বকেয়া পাওনা বুঝে পাবেন।
প্রসঙ্গত : চাকরির মেয়াদ ভেদে শিক্ষকদের বকেয়া পাওনার পরিমান ভিন্ন। উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা যায় বকেয়া পাওনার পরিমান প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা।