Link BandarQQ
Situs Idpro
Pkv QQ Online
Situs QQ Online
Situs Judi Bola
Link Pkv Games
Situs Pkv QQ
Link BandarQQ Online
Situs BandarQQ Online
Login Pkv Games
Login Pkv QQ
Link BotakQQ
Agen Pkv Games
BandarQQ
Poker Online Terpercaya
Pkv Games
Pkv Games
Pkv Games
Download Apk Pkv
Hasil Bola
Hasil Togel
Film Lk21
Mlbbtv
Nonton Film Semi
BandarQQ Pkv
Link Judi Bola
Link BBM88
Login BBM88
Link Judi Online
Link Judi Online
Link Judi Sbobet
Agen Judi Bola
BandarQQ Online
মিরসরাইয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে শীতল পাটি - চলমান মিরসরাই

মিরসরাইয়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে শীতল পাটি

top Banner

মোহাম্মদ ইউসুফ

মিরসরাইয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারের নারীদের অন্যতম পেশা শীতল পাটি বোনা। এর কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করা হয় পাটিপাতা বা পাটিবেত। একটি শীতল পাটি বুনতে সময় লাগে ১৫-২০ দিন। আর ভালো মানের একটি শীতল পাটি বিক্রী হয় ৯’শ-১ হাজার টাকায়। উপজেলার মিঠাছরা বাজার, বামনসুন্দর বাজার, ঝুলনপোল বাজার, আবুতোরাব বাজার, আবুরহাট বাজার, মাদবারহাট বাজার, শান্তিরহাট বাজার, বড়দারোগারহাট বাজারে শীতল পাটি বেচা কেনা হয় সবচেয়ে বেশী। প্রতি মাসে বাজারগুলোতে প্রায় কোটি টাকার শীতল পাটি বেচা কেনা হয়।

জানা গেছে, শীতল পাটির প্রধান উপকরণ হলো সবুজ রঙের পাটিবেত। স্থানীয় ভাষায় এটিকে পাটিপাতা বলে। বাড়ির আশে পাশের পতিত জমি কিংবা নিম্নাঞ্চলে পাটিবেত রোপন করা হয়। ৮০টি পাটিবেত ১৫০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়।

এই পাটিবেত কিনে গ্রামের মহিলারা বেত বের করে লাল, নীল, কালো সহ বিভিন্ন রঙে রাঙ্গিয়ে শীতল পাটি তৈরী করেন। যেখানে ফুল, পাখি সহ বিভিন্ন ডিজাইনে পাটি বুনা হয়। স্থানীয় বাজারে ৭ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৬ ফুট প্রস্থের ১টি শীতল পাটি ৯’শ থেকে ১ হাজার টাকা, ৫ ফুট দৈর্ঘ্য আর ৩ ফুট প্রস্থের ১টি শীতল পাটি ৪৫০-৫০০ টাকা, সিঙ্গেল শীতল পাটি ৩৫০ টাকা, বুক্কা পাটি ১৩০-২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিটি শীতল পাটি তৈরী করতে ১০-১২ দিন লাগে। আর শীতল পাটিতে যদি ফুল, পাখি সহ বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে ডিজাইন করা হয় তাহলে ১৫-২০ দিন সময় লাগে তৈরী করতে।

 উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে কম বেশী শীতলপাটি বুনতে দেখা যায়। শীতল পাটি বুনে সংসারে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীও সচ্ছলতা আনেন। গ্রীষ্মকাল এলেই বেড়ে যায় শীতল পাটি বুনার কাজ। কারণ গ্রামের কুঁড়ে ঘর থেকে শহরের দালান কোঠা পর্যন্ত শীতল পাটির ব্যবহার রয়েছে। উপজেলার সবচেয়ে বেশী শীতলপাটি তৈরি হয় উপজেলার ইছাখালী, বামনসুন্দর, কাটাছড়া, নাহেরপুর, ইসলামপুর, মিঠাছড়া এলাকায়। তবে প্রযুক্তির বিকাশে প্লাস্টিক পণ্য সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় এখন শীতল পাটির চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। এছাড়া পতিত জমিতে কাঠের গাছ কিংবা পুকুর খননের ফলেও কমে যাচ্ছে পাটি বেত। এতে করে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন শীতল পাটি কারিগররা।

শীতল পাটির কারিগর বামনসুন্দর গ্রামের কহিনুর বেগম বলেন, পাটিপাতা সংগ্রহ করে প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর আবরণ ছাড়িয়ে তোলা হয় দুই রকমের বেত। তারপর রঙ দিয়ে রাঙানো হয়। এরপর শুরু হয় পাটি বোনা। শীতল পাটিতে গাছ-গাছালি, পাখি, মসজিদ, হরিণ, বাঘ, ফুল, হাতি, ঘোড়ার আকৃতি দিয়েও বোনা হয়। তিনি আরো বলেন, প্লাস্টিকের পণ্য সহজলভ্য হলেও শীতল পাটির আলাদা কদর আছে। বিয়ে বাড়িতে মেয়ে পক্ষ এখনো ২টি করে শীতল পাটি, ১টি নামাজের বটনী দেয়। এছাড়া অনেকে শখ করেও শীতল পাটিতে ঘুমায়। তবে পরিশ্রমের তুলনায় শীতল পাটির দাম তেমন বাড়েনি বলে দাবী করেন এ পাটিশিল্পী।

উপজেলার মিঠাছরা বাজার, বামনসুন্দর বাজার, ঝুলনপোল বাজার, আবুতোরাব বাজার, আবুরহাট বাজার, মাদবারহাট বাজার, শান্তিরহাট বাজার, বড়দারোগারহাট বাজারে শীতল পাটি ক্রয় বিক্রয় চলে প্রতি সপ্তাহে। বাজারগুলো থেকে চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলী, আনোয়ারা, পটিয়া, বাঁশখালী, কোম্পানীগঞ্জ, ফেনী, নোয়াখালী, কক্সবাজার, টেকনাফ, চকরিয়া, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্রণবাড়িয়া, সিলেট, রংপুর থেকে বেপারীরা এসে শীতল পাটি কিনে নিয়ে যান।

রবিবার (৩১ অক্টোবর) উপজেলার মিঠাছরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আকাশে সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে শীতল পাটি বেচা কেনা। দূর দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন নানারকম নকশা আর কারুকার্য্য শোভিত শীতল পাটি সংগ্রহে। সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বৃহস্পতিবার এমনই চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রামে শীতল পাটির সবচেয়ে বড় বাজার মিঠাছরা বাজারে। এ বাজারে শত শত নারী-পুরুষ আসেন পাটি বিক্রি করতে। অপূর্ব নির্মাণ শৈলী আর রঙ-বেরঙের পাটি নিয়ে হাজির হন তারা। যে পাটির নির্মাণ ও নকশা শৈলী যত সুন্দর সে পাটির দামও তত বেশি। ইজারাদারের তথ্য মতে, সপ্তাহে এ বাজারে শীতল পাটির লেনদেন হয় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মতো। সকাল ৮টার আগে শীতল পাটি বেচা কেনা শেষ হয়ে যায়।

উপজেলার মিঠাছরা বাজারে শীতল পাটি কিনতে আসা শীতল পাটি ব্যবসায়ী মনসুর আলম বলেন, মিরসরাইয়ের শীতল পাটিগুলোর গুণগত মান খুবই ভালো। এখানকার মহিলারা নিপুন হাতে শীতল পাটি তৈরী করেন। আমরা স্থানীয় বাজারগুলো থেকে পাটি ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যায়। মিঠাছরা বাজারে সপ্তাহে রবিবার ও বৃহস্পতিবার শীতল পাটি বেচা কেনা হয়। যেখানে রবিবার প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ও বৃহস্পতিবার প্রায় ১২ লক্ষ টাকার শীতল পাটি বেচা কেনা হয়। এছড়া মিরসরাইয়ের অন্যান্য বাজারগুলোতে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার শীতল পাটি বেচা কেনা হয় বলে জানান তিনি।

মিঠাছরা বাজারে শীতল পাটি বিক্রী করতে আসা উপজেলার কাটাছরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, ‘দুধারি’ একটি শীতল পাটি বুনতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগে। পাটি বেত, রং কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ৫৫০ টাকার মতো। তিনি ২,২০০ টাকায় দুইটি শীতল পাটি বিক্রি করেছেন।

মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন বলেন, মিরসরাইয়ের শীতল পাটির চাহিদা সারা দেশে রয়েছে। এখানকার পাটির গুনগত মান ভালো। শীতল পাটি বেচাকেনার জন্য মিঠছরা বাজারে নতুন শেড নির্মাণ করবেন বলে জানান তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, মিরসরাইয়ের গ্রামীণ অর্থনীতিতে শীতল পাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শীতল পাটি তৈরীর সাথে সম্পৃক্ত নারীদের তালিকা করা হবে। উনাদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের যদি আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন হয় বা ঋণ নিতে চান তাহলে বিনা সুদে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মিরসরাইয়ের প্রতিটি গ্রামে শীতল পাটি তৈরী করা হয়। এখানকার শীতলপাটির কদর রয়েছে সারা দেশে। আর্থিক সংকটে কেউ যদি শীতল পাটির কাঁচামাল কিনতে না পারেন তাহলে তিনি সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। 

আরো খবর