পাহাড়ি ঝরনায় এসে পথ হারাচ্ছেন পর্যটকেরা

top Banner

পাহাড়ি ঝরনার রানী হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা। এখানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১০টি ঝরনা। প্রতিদিন এসব ঝরনা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকেরা। তবে সাথে গাইড না নেওয়ায় প্রায় সময় পথ হারিয়ে বসেন অনেক পর্যটক। ঘটছে দুর্ঘটনাও। এখানে রয়েছে খৈইয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া, সহস্রধারা, মহামায়া, বাওয়াছড়া, রূপসী ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা, হরিণাকুন্ড ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা ও মেলকুম গিরিপথ।

গত দেড় মাসে মিরসরাইয়ের দুটি ঝরনার গহিন জঙ্গলে ৩টি দলের ১৫ জন পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের সবাইকে উদ্ধার করা গেলেও এসব ঘটনায় চিন্তিত বন বিভাগ, ইজারাদার, পুলিশ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে আসা পাঁচ পর্যটক খৈয়াছড়া ঝরনার ওপরে উঠে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দিক ভুল করে হারিয়ে যান বনের গভীরে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) খবর পেয়ে প্রায় দুই ঘন্টা অভিযান চালিয়ে রাত সাড়ে নয়টায় তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই থানার পুলিশ। এর আগে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মেলখুম গিরিপথে গত ১৪ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল পর্যটকদের পথ ভুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুই দফায় হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদের উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানার পুলিশ।

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদ হোসেন বলেন, ‘নতুনভাবে আবিষ্কার হওয়া মেলখুম গিরিখাতটি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় পর্যটকেরা দিক ভুল করেন। অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া এ স্থানে না যেতে পর্যটকদের অনুরোধ করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এছাড়া পর্যটকেরা সাথে গাইড না নেওয়ার কারণে ঝরনায় প্রায় সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে। গত ৫ বছরে ঝরনার উপর থেকে পড়ে এবং পানির ¯্রােতে ভেসে অন্তত ১৫জন পর্যটক মারা গেছে। আহত হয়েছে আরো শতাধিক পর্যটক।

জানা গেছে, কিছু বিষয়ে সতর্ক না থাকায় অনেক সময়ই ঘটে যাচ্ছে দুর্ঘটনা। পর্যটকদের অসতর্কতার জন্য দুর্ঘটনা ঘটে, হারিয়ে যায়। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহ বেশ কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন মিরসরাই উপজেলা ও থানা প্রশাসন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খেয়ালখুশি মতো গহীন জঙ্গলসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলোমেলোভাবে বেড়াতে গিয়ে ছিনতাইয়ের কবলেও তারা পড়ছে। এর জন্য অনেকেই দর্শনার্থীদের দায়িত্বহীনতা ও অসংযত আচরণকে দায়ী করছেন।

বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) সভাপতি মোঃ সরওয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি। খৈয়াছরা, সহ¯্রধারা, নাপিত্তা ছড়া, লবণাক্ষছড়া, বাওয়াছড়া, কমলদহ ছড়া, সোনাইছড়া ঝরনা এলাকায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য ২০ জন ইকো গাইডকে নিয়োগ দিয়েছি। পর্যটকরা যদি ঝরনা এলাকায় যাওয়ার সময় ইকো গাইডদের সাথে নিয়ে যায় তাহলে হারিয়ে যাওয়া ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, পর্যটকদের অজ্ঞতা ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে যত বিপদ ঘটছে। ঝরনাগুলোয় ইজারাদারদের মাধ্যমে গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকেরা গাইড ছাড়াই অচেনা জায়গাগুলোয় ঘুরতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।

ফেনী সদরের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষার্থী কাউসার আজম বলেন, মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো এখন পর্যটনের বড় জায়গা। পর্যটকদের দিকনির্দেশনা ও নিরাপত্তার জন্য এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।

মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলার বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ এলাকার খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহ¯্রধারা, লবণাক্ষ, সোনাইছড়ি, বাওয়াছড়া ও রূপসী ঝরনা পর্যটন স্থান ইজারা দেওয়া আছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়।

বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের সবকটি ঝরনার ইজারা পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজের তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ঝরনা এলাকাগুলোয় সতর্ক করে ব্যানার ও সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে। কিন্তু পর্যটকেরা কোনো নিয়ম মানেন না। আমরা সবাইকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে ঝরনা এলাকা ত্যাগ করতে বললেও অনেকে সন্ধ্যা করে ফিরতে গিয়ে বিপদে পড়েন।’

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, মেলখুুম ট্রেইলের ব্যবস্থাপনায় কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে এটিকে যথাযথ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। তিনি পর্যটকদের সাথে গাইড নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আরো খবর