হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা

top Banner

এম মাঈন উদ্দিন

মিরসরাইয়ে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অনেক খেলা। উপজেলার কোন গ্রামে দেখা যায়না এসব খেলা। ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে জনপ্রিয় সেই খেলাগুলো। আধুনিক সংস্কৃতির বিশ্বে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না প্রাচীন খেলাগুলো। হাডুডু দাঁড়িয়াবাঁন্দা, কানামাছি, গোল্লাছুট, লুডু, লাটিম, বৌচি, টিলো এক্সপ্রেস, ডাংগুটি, মোরগের লড়াই, ওপেন্টি বায়োস্কোপ প্রভৃতি খেলা ছিল খুবই জনপ্রিয়।

কালের বিবর্তনে ওই সব খেলাই হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে। এখন কার সময়ের অনেক তরুণ জানে না ওই খেলাগুলো কী বা কিভাবে খেলা হতো। গ্রামে থাকা তরুণদের এখন ল্যাপটপ,কম্পিউটার নিয়ে ছোটাছুটির পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আগে প্রতিটি গ্রামের স্কুলের মাঠে, বাড়ির পাশের খালি জমিতে, হাটবাজারের মাঠে প্রতিনিয়ত ফুটবল, ভলিবল ও হাডুডু খেলার প্রতিযোগিতা হতো। এক গ্রামের সাথে অন্য গ্রাম, এক স্কুলের সাথে অন্য স্কুল, বিবাহিত বনাম অবিবাহিত এভাবে পরিচালিত হতো প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতাগুলো নিয়ে রীতিমত সাড়া পড়ে যেত। দূর-দূরান্ত থেকে হেঁটে এসে খেলা দেখতেন। আর খেলা উপলক্ষে আয়োজন হয়ে যেত ছোটখাট মেলা। গ্রামের মানুষ উৎসাহ নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখে আনন্দ পেতো।

খুশিতে আত্মহারা হতো। হোটেল বা চা-দোকানে খেলা নিয়ে চলত আলোচনা। প্রতিযোগিতা যে এখনো হচ্ছে না তা নয়। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোর ব্যাপারে আর আগ্রহ নেই গ্রামের তরুণদের। কানামাছি, বৌচি খেলায়ও আগ্রহ নেই স্কুলের কিশোর- কিশোরীদের। বড় প্রতিযোগিতায় সেরাদের জন্য থাকত শিল্ড, কাপ, টেলিভিশন পুরস্কার হিসেবে। বর্তমানে শিল্ড তো পুরোপুরি হারিয়েই গেছে। ‘লুডু খেলা ছিল গ্রামের একটি প্রিয় খেলা। অবসর সময়ে ছোট-বড়, গৃহবধূসহ সবাই এ খেলাটি খেলতেন। বৃষ্ট নামলে লুডু খেলার পাশাপাশি ধুম পড়ত মুড়ি খই মিঠাই খাওয়ার। এখন আর আয়োজন করে লুডু খেলা হয়না। বালকদের পছন্দ ছিল লাটিম খেলা। লাটিম খেলার একটি আকর্ষণীয় প্রতিযোগিতা ছিল লাটিম ফাটানো। র্অর্থাৎ খেলার মাধ্যমে কে কার লাটিম ফাটাতে পারে।

নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো ইতিহাস কিংবা রূপকথার গল্পের মতো শুনাবে। আকাশ সংস্কৃতির ফলে বর্তমান বিশ্ব চলছে নতুন ধারায়। তবে গত কয়েকমাস ধরে উপজেলার ৩ নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ফুটবল, ক্রিকেট সহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করছেন জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মকবুল আহম্মদ কল্যান পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব রেজাউল করিম মাষ্টার। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে করোনার কারণে ছেলেরা খেলাধুলা করতে পারেনি। স্কুল কলেজও বন্ধ। এতে করে তাঁরা অলস হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি ইউনিয়নে প্রায় ৫ লাখ টাকার খেলাধুলার সরঞ্জাম বিতরণ করেছি। কারণ যুব সমাজকে মাদক থেকে রক্ষা করতে হলে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই। আমি আশা করবো ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে ফুটবল, ক্রিকেট সহ বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে মিরসরাইয়ের সাবেক তুখোড় ফুটবলার উপজেলার ১৪ নম্বর হাইতকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামীন অনেক পুরোন খেলা এখন আর দেখা যায় না। আমার মনে হচ্ছে ফুটবল খেলাও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এখন বছরে দুএকটি টূর্ণামেন্ট ছাড়া তেন ফুটবল খেলা চোখে পড়েনা। সবাই ক্রিকেট খেলা নিয়ে ব্যস্ত।’ আমি আশা করব পুরনো খেলা চালু করতে না পারলেও আমাদের ফুটবল খেলাটি নিয়মিত খেলতে হবে।’

আরো খবর