মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। মেশিনটি কখন মেরামত হবে অথবা নতুন মেশিন সংযোজন হবে এবিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এক্স-রে বিকল থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হয়ে, সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৯৯৩ সালের ১১ অক্টোবর তৎকালীন সংসদ সদস্য এম.এ জিন্নাহ এক্স-রে মেশিনটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর কয়েক মাস সচল থাকলেও তা আবার বিকল হয়। এতে দীর্ঘদিন মেশিনটি একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকে। পরে ২০০৭ সালের দিকে এক্স-রে মেশিনটি মেরামত করে তা চালু করার কয়েক মাস পর আবার বিকল হয় বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরপর থেকে অধ্যবদি ১৪ বছর ধরে বিকল হয়ে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে মেশিনটি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী জানান, গত ১৪ বছরে এক্স-রে কক্ষটি খোলা হয়নি বললেই চলে।
সরেজমিন বুধবার (৬ ডিসেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, দরজা তালাবদ্ধ। তালাখুলে ভেতরে ঢুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। এই রুম বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। মোবাইলের আলো জ¦ালিয়ে পরিদর্শন করা হয়। ধুলাবালিতে মেশিনটি ঢাকা রয়েছে। ভেতরে ঢোকার মতো অবস্থাও নেই। এক্স-রে কক্ষের পাশের একটি কক্ষের ছাদের পাইপের জোড়া থেকে পানি এসে এক্স- রে মেশিনের কক্ষের মেঝেতে জমে আছে। ড্রাকরুম ও এসিও নষ্ট। ভেতরে দুর্গন্ধ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরকিপার মোহাম্মদ রাশেদ জানান, দীর্ঘ সময় ধরে এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকায়
কক্ষটি তেমন খোলা না হওয়ায় এটিতে পানি এবং ময়লা জমে থাকলেও কারও নজরে আসে না। খুলেও কি করবো? যেহেতু সবকিছু নষ্ট।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি মাসে ৮ হাজারের বেশি রোগী আউট ডোরে চিকিৎসাসেবা নেন। দুই হাজারের বেশি রোগী ইনডোরে সেবা নেন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী জরুরি বিভাগ থেকে সেবা নেন। সরকারি এক্স-রে মেশিনে কোনো রোগীর এক্স-রে করা হলে তাতে রোগীর ১০০-২০০ টাকা ব্যয় হয়। অন্য কোথাও এর ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলে জানা গেছে। এছাড়া ৪টি ইসিজি মেশিনের ২টি নষ্ট হয়ে রয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী উপজেলার ধুম ইউনিয়নের নাহেরপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহানা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান আগের তুলনায় কিছুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার যন্ত্রপাতিগুলো সচল থাকলে আরও বেশি সেবা পাওয়া যেত। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কোনো নজর দিচ্ছেন না বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মলিয়াইশ গ্রাম থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বৃদ্ধ নুরুল হুদা বলেন, হাসপাতালে এখন আসলে ডাক্তার পাওয়া যায়। আগে নিয়মিত ডাক্তার থাকতো না। তবে এক্স-রে মেশিন অনেক বছর ধরে বিকল থাকায় আমরা সেবা পাচ্ছি না। এছাড়া হাসপাতালের বাধরুম অপরিস্কার থাকে সব সময়।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মো. কবির হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় রেডিওগ্রাফার অন্য জায়গায় বদলি হয়ে চলে গেছে। মেশিনটি সচল করা হলে কিংবা নতুন একটি মেশিন আনা হলে এলাকার রোগীরা সেবা পেতেন।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এখন যেটি আছে তা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে বিকল হয়ে আছে। তা আর সচল হবে বলে মনে হয় না। উন্নতমানের একটি এক্স-রে মেশিনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লেখা হয়েছে।