মোহাম্মদ ইউসুফ:
মিরসরাই উপজেলার ২ নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের বারোমাসি হিঙ্গুলী খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে যুবলীগ নেতা দাউদুল ইসলাম সোহাগ। খাল থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভেঙ্গে গেছে হিঙ্গুলী ফরেস্ট বিট সড়ক ও কয়েক একর কৃষি জমি। বিগত ১০-১২ বছর যাবৎ অবৈধ ভাবে খালটি থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সোহাগের ভয়ে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করছেনা। বালু পরিবহনের ফলে ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে গেছে হিঙ্গুলী ফরেস্ট বিট সড়কের বেশ কিছু অংশ।

সরেজমিনে, উপজেলার ২ নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ফরেস্ট বিট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বারোমাসি হিঙ্গুলী খাল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বালু উত্তোলন করে ফরেস্ট বিটের সামনে একটি জমিতে স্তুপ দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে স্কেবেটরের সাহায্যে বালু তুলে পিকআপে করে বালু বিক্রির জন্য বিভিন্ন জায়গা নেওয়া হচ্ছে। হিঙ্গুলী খাল থেকে ১০-১২ বছর যাবৎ বালু উত্তোলন করতেছেন যুবলীগ নেতা দাউদুল ইসলাম সোহাগ। তার নামে জোরারগঞ্জ থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৯ মার্চ বারইয়ারহাট পৌরসভার কামাল মার্কেট এলাকা থেকে তাকে ও তার তিন সহযোগীকে ৩ হাজার ১৮০ পিস ইয়াবা ও ৭ বোতল ফেন্সিডিল সহ গ্রেপ্তার করেছিলো জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। বালু উত্তোলনের ফলে হিঙ্গুলী ফরেস্ট বিট সড়কের প্রায় ৪০ ফুট সড়ক ভেঙ্গে খালে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া কয়েক একর কৃষি জমিও ভেঙ্গে গেছে। বর্ষাকালে বালু উত্তোলন কিছুটা কম থাকলেও খালটি থেকে সারা বছর বালু উত্তোলন করা হয় বলে জানা গেছে। বালু উত্তোলনের জন্য প্রতিদিন হিঙ্গুলী ফরেস্ট বিট এলাকায় সোহাগের অধীনে কাজ করা ১০-১৫ জন শ্রমিক থাকে। যারা বালু উত্তোলন ও বিক্রির কাজ করে। বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয় জমির মালিক, কৃষক প্রতিবাদ করলে তারা তাদের হয়রানী ও বিভিন্ন ভাবে হুমকী দেয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সড়ক ও কৃষি জমি খালে বিলীন হয়ে গেলেও প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কৃষক বলেন, হিঙ্গুলী খাল থেকে প্রতিদিন মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করা হয়। যার ফলে হিঙ্গুলী ফরেস্ট বিট সড়ক ও অনেক কৃষি জমি ভেঙ্গে খাল বড় হয়ে গেছে। প্রতিবছর জমির পাশ ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রতিদিন ৮-১০টি পিকআপে করে ৭০-৮০ টিপ বালু বিক্রি করা হয়। বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সোহাগ সহ তার সাথে থাকা বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন ভাবে হুমকী-দুুমকী দেয় বলে জানান তিনি।
দাউদুল ইসলাম সোহাগ হিঙ্গুলী খাল থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বলেন, খালটি হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হারুনের নামে লিজ নেওয়া আছে। তাই তিনি বালু উত্তোলন করেন। বারোমাসি খাল চেয়ারম্যান কার থেকে লিজ নিয়েছে এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি তিনি। এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে তিনি এই প্রতিবেদকের মোবাইল সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দেন।
উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল ভূঁইয়া বলেন, দাউদুল ইসলাম সোহাগ নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিলেও সে ইউনিয়ন বা পৌরসভার কোন দায়িত্বে নেই। যুবলীগ বৃহৎ সংগঠন; অনেকে এর সমর্থক। তাই বলে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কেউ অনৈতিক কাজ করতে পারবেনা। অবৈধ কাজ করলে প্রশাসন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।
হিঙ্গুলী খাল থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন হারুনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিভি করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান বলেন, খাল থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। হিঙ্গুলী খালে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে।