\ এম মাঈন উদ্দিন \
আগুনে পুড়ছে চগ্রামের মিরসরাই উপজেলাজুড়ে অবস্থিত সবুজ পাহাড়। দূর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে হাজার হাজার পাহাড় পুড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে এখানকার জীববৈচিত্র। পুড়ে গেছে অনেকের লাখ লাখ টাকার ফলজ ও বনজ বাগান।
এতে করে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন তাঁরা। আগুনের শিখায় পুড়ছে বনের পশু,পাখি ও সবুজ গাছ গাছলা । নষ্ট হচ্ছে মাটির টপ সয়েল। চৈত্র-বৈশাখ মাস আসলেই প্রচন্ড খড়তাপে গাছের পাতা শুকিয়ে নিচে ঝড়ে পরে স্তুপ হয়ে যায়। অনেকে নিজের করে দখল করতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ছে মাইলের পর মাইল পাহাড়। এছাড়া এক শ্রেণীর লোক ইচ্ছায়-অনিচ্ছাই বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বনের মধ্যে ফেলে দেয়া সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
জানা গেছে, গত এক মাস ধরে উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন, করেরহাট-রামগড় সড়কের দুই পাশে অবস্থিত পাহাড়, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মিরসরাই সদর, খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিস্তিন্ন পাহাড় পুড়ে যাচ্ছে। দিনের বেলায় আগুন খুব বেশি চোখে দেখা না গেলেও রাতের বেলায় আগুনের পাহাড় পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেন আশপাশের বাসিন্দারা। যার ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করছে পরিবেশবিদরা । আগুন দেওয়ার ফলে পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মাটিতে থাকা উপকারী অণুজীব ধংস হয়। হয়। বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ধবংস হয়।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালাগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ভূমির উর্বরতা নষ্ট হয় । যার ফলে ভূমি ধ্বসের আশংকা থাকে এবং বন্যপ্রাণী খাবার সংকট দেখা দেয় যার ফলে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসে।
উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার বাসিন্দা রনি ভৌমিক বলেন, প্রতি বছর এসময়ে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর সবুজ পাহাড়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর বেশি পুড়ছে বলে জানান তিনি। এভাবে চলতে থাকলে সবুজ পাহাড় ন্যাড়া হয়ে জীববৈচিত্র হুমকির পাশাপাশি পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বন বিভাগকে এই বিষয়ে দ্রæত কার্যকরী প্রদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান তিনি।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ফলজ বাগানের মালিক মোঃ ওমর শরীফ জানান, উনার বাগানে থাকা প্রায় ৭ হাজার ৫শ বিভিন প্রজাতির গাছ ও চারা আগুনে পুড়ে গেছে। তারমধ্যে বেনানা আমগাছ ১ হাজার, গৌড়মতি আমাগাছ ৫শ, সুরমা ফজলি ৫শ, চাকাপাত আম ৫শ, বারি ৪ আম ৫শ, থাই অমলকি ৩শ, থাই জাম্বুরা ৩ হাজার ৫শ, থাই সপাদ, লটকন, লেবু ৫শ। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক সিএমসি নির্বাহী কমিটির সভাপতি এস এম সরোয়ার উদ্দিন বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু লোকজন অজথা পহাড়ে আগুন ও ঝুম চাষ করার ফলে পাহাড়ে আগুন দিয়ে বন ধবংস করছে।পাশা,পাশি পশু,পাখি বিলুপ্ত হতে চলছে। হুমকির মুখে পড়েছে পার্বত্যঞ্চলের বন্যপ্রানী। এখনো প্রতিদিন হাতি বনের খাদ্য না পেয়ে লোকালয়ে এসে মানুষের বাসা-বাড়িতে হামলা করছে খাদ্য সংকটের ফলে।
এই বিষয়ে সহকারি বন সংরক্ষক (ভারপ্রাপ্ত,করেরহাট) হাসানুর রহমান বলেন, পাহাড়ে পাহারার দায়িত্বে টহল দল রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম। পাশাপাশি সিএমসি কমিটির সদস্যরাও পাহারা দিয়ে থাকেন। মানুষের অসাবধানতার কারণে পাহাড়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখনো কোন কোন স্থানে আগুন জ্বলছে। বৃষ্টি হলে কমে যাবে। এছাড়া পাহাড়ে আগুন দেওয়ার ফলে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে স্থানীয় জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি পাহাড়ে আগুন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে প্রচারণমূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।