এম মাঈন উদ্দিন
১৭ মাস পর সারাদেশের মতো মিরসরাইয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় পাঠদান শুরু হয়েছে। শির্ক্ষার্থীরা ঘর ছেড়ে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুক্ত ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। আগে থেকেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সাজানো গোছানো ছিলো বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমগুলো।
বিদ্যালয়ের গেইটে সাটানো ছিলো জনসচেতনতামূলক রং বেরংয়ের ব্যানার, পেষ্টুন, বেলুন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিচালনা পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলের ষ্টিক, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে গেইটে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে অপেক্ষা করেন।
যেন পুরো ক্যাম্পাসে সাজ সাজ উৎসবের আমেজ। কতোদিন দেখা হয়না সহপাঠী এবং শিক্ষকদের সাথে। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই সহপাঠীদের জড়িয়ে ধরে আবেগে চোখের জল টলমল করতে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীদের। শিক্ষকরাও আবেগে আপ্লুত ছিলেন। মহামারি করোনায় অনেকের বাবা-মা মারা গেছেন, কারো বিয়ে হয়ে গেছে। বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় করেন।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, স্কুলগুলোর গেইটে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিক্ষা করা হয়েছে। উপজেলা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কেএম সাঈদ মাহমুদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ মজুমদার, উপজেলা আওয়ামীলীগে সহ সভাপতি কামরুল আহসান হাবীব, যুগ্ম সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ দিদার।
ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জনসচেতনতামূলক লিপলেট, শিক্ষা উপকরন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। করেরহাট ইউনিয়নের স্কুল ও মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে-মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী বিতরণ করেন মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল হাসান। মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাষ্টার বিভিন্ন স্কুল মাদরাসায় ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ করেন।
মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কলেজে শিক্ষার্থীরা ফিরে আসায় কলেজ ক্যাম্পাস প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে। এই যেন বাগানে ফুল ফুটেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে মধুর সম্পর্ক সেটার পরিপূর্ণতা পেয়েছে।
মিরসরাই লতিফিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা একরামুল হক বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্যবিধি ও শারিরীক দুরত্ব নিশ্চিত করে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করা হয়ছে।
মিরসরাই এসএম মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন মাজহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে অনেক আনন্দিত। শিক্ষকরাও অতি আদরে তাদের ক্লাশে নিয়ে পাঠদান করান।
মিরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত ১৯ দপা কর্মসূচী মেনে উপজেলার ৬টি কলেজ, ৪৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৬টি মাদরাসার শ্রেণী কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর আগে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রহমান চৌধুরী বলেন, উপজেলার ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্ডেনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন শ্রেণী কার্যক্রম চলবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিনহাজুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক ছিলো। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কিছু কিছু বিদ্যালয়ে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ব্ল্যাকবোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। তা দ্রুত সংস্কার করা হবে।