দীর্ঘ সময় ধরে পরিবার নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া বসবাস করে আসছেন স্বপ্নচারি প্রবাসী মঈন উদ্দিন। অষ্ট্রেলিয়া বসবাস করলেও তার মনটা পড়ে থাকে নিজ জন্মভূমিতে। তাই তো নিজ গ্রামে পাহাড়ি প্রায় ৩৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তুলেছেন একটি সমন্বিত খামার। এখন সেই খামারকে পর্যটন স্পট হিসেবে রূপ দিয়েছেন তিনি। নাম দিয়েছেন হিলসডেল মাল্টি ফার্ম। প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন দর্শনার্থী। সেখানে রয়েছে ডেইরী ফার্ম, হারিণের খামার, ময়ুর, দেশি-বিদেশী হাঁস মুগরী, নানা জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষুধী বৃক্ষ।
সে হিলস ডেল মাল্টিফার্মের অভ্যন্তরে ১৫ একর জমিতে লাগান আমের চারা। ১০ বছর আগে লাগানো হাড়িভাঙা ও আ¤্রপালি জাতের আমের চারা আজ ফলবান বৃক্ষ। গাছগুলোতে ঝুলছে থোকায় থোকায় পাকা আম। আর সেসব পাকা আমের গন্ধে মৌ মৌ করছে সমগ্র আম বাগান। আমের ভারে যেন নুয়ে পড়ছে গাছে ডাল।
শখের বসে লাগানো অলিনগরের হিলসডেল মাল্টি ফার্মে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদন হচ্ছে আম। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে হাড়িভাঙা জাতের আম। গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে শুরু হয় পাকা আম সংগ্রহ। জানা যায়, চলতি মাসের পুরোটাই বিক্রি করা যাবে আম। এরই মধ্যে এ বাগান থেকে ৬ টন আম বাজার জাত হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলনও বেড়েছে এবার। ৬০০ গাছে আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টন। উৎপাদিত এসব আম যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী সহ দেশের বেশকিছু অঞ্চলে। বেশিরভাগ আম বিক্রি হয়ে অনলাইনের মাধ্যমে। বিক্রিত আম কুরিয়ারে পাঠানো হচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। আবার বাগানে এসেও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। কোন ধরনের ফরমালিন, কেমিকেল ব্যবহার না করায় এই বাগানে উৎপাদিত আমের বেশ কদর রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হিলসডেল মাল্টি ফার্মে আম বাগানের পাশাপাশি রয়েছে পর্যটন ব্যবস্থা। এ মাল্টি ফার্মের আরো এক নাম মধুরিমা রিসোর্ট। অবসরে দূর দূরান্ত থেকে এখানে মানুষ ঘুরতে আসেন। বাগানের সারি সারি আম গাছের তলায় রয়েছে বসার বেঞ্চ। এসব বেঞ্চে বসে সময় কাটান পর্যটকরা।
বাগানে আম ক্রয় করতে আসা আবুতোরাব এলাকার জামশেদ আলম বলেন, আমি গত বছরও এই বাগান থেকে হাড়িভাঙ্গা আম নিয়েছি। এবারো এখান থেকে আম নিতে এসেছি। আমি দুই কেরেট (৫০ কেজি) আম নিয়ে যাবো। এই বাগানের আম খুব মিষ্টি।
হিলসডেল মাল্টিফার্মের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম বলেন, হিলসডেল মাল্টি ফার্মে জৈব উপায়ে আম উৎপাদন করা হয়। এরই মধ্যে হাড়িভাঙা জাতের আম বাজারজাত করছি আমরা। আ¤্রপালী কিছু দিনের মধ্যেই পাকতে শুরু করবে। বিগত বছরগুলো তুলনায় চলতি বছরে ফলনও বেশি, বিক্রিও বেশি। শতকরা ২৫ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে।
হিলসডেল মাল্টিফার্মের সুপারভাইজার বাইরুল ইসলাম বলেন, হাড়িভাঙা আম আমরা কেজিপ্রতি ৮০ টাকা করে বিক্রি করছি। এ এলাকাটি আম উৎপাদনের জন্য আদর্শ জায়গা। তবে পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় পানি সেচ বেশি দিতে হয়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমি এই বাগানে যোগ দিয়েছি ৬ মাস আগে, তাই এখানকার মাটি সর্ম্পকে পুরোপুরি ধারনা ছিলো না। এ বছর আরো অনেক বেশি আমের লক্ষ্যমাত্র ধরেছিলাম। অনেক আম ঝরে যাচ্ছে। আশা করছি যদি আবহাওয়া ভালো থাকে আগামীতে আরো ভালো ফলন হবে ইনশাআল্লাহ।
অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মঈন উদ্দিন জানান, আমার বাগানে বিগত সময়ের তুলনায় এবছর ভালো ফলন হয়েছে। কোন ধরনের ফরমালিন বা কেমিকেল ব্যবহার না করায় এখানকার আমের বেশ চাহিদা রয়েছে। বেশির ভাগ আম অনলাইনে বিক্রি হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রবাসে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে এই এই খামারে। ছুটি পেলেই আমি খামারে চলে আসি।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মিরসরাইয়ে বানিজ্যিকভাবে আমের বাগান বাড়ছে। তার মধ্যে করেরহাটে অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মঈন উদ্দিনের হিলসডেল মাল্টি ফার্ম অন্যতম। আমি কয়েকবার ওই বাগানে গিয়েছিলাম। এটি সম্ভাবনাময় একটি বাগান।