ডেস্ক রিপোর্ট
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহর লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে গ্রামের বাসিন্দারা। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া ছাড়া লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাযায় উপস্থিত ছিলেন না প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। গ্রামবাসী বাধা দেওয়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুর সদস্যরা লাশের গোসল ও দাফনের ব্যবস্থা করে।
মিরসরাই করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের আবদুর রশীদ মুহুরী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্ল্যাহ গত ৩০ জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার স্ত্রী ও পরিবারের ৫ সদস্যও বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত। মৃত্যুর পর তার ২ ছেলে লাশ দাফন-কাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাড়ির লোকজন ও গ্রামবাসী বাধা দেয়। পরে তারা মিরসরাই সদর ইউনিয়নে শেষ বিদায়ের বন্ধু কার্যালয়ে বাবার লাশ নিয়ে ভোর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। বুধবার (৪ আগস্ট) সকালে ওই সংগঠন কার্যালয়ে লাশের গোসল শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমামও জানাযায় আসেননি।
মো. সাজেদ উল্ল্যাহর ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, করোনায় মৃত্যুর কারণে বাবার লাশ গ্রামে দাফন করা যাবে না বলে জানায় গ্রামবাসী। আমাদের বাড়ির প্রবেশমুখে বাঁশ পুঁতে দেওয়া হয় যাতে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে না পারে। বিষয়টি ১নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নকে জানালে তিনি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুর মাধ্যমে লাশ পরিবহন ও গোসলের ব্যবস্থা করেন। লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর গ্রামের মসজিদের ইমাম জানাযার নামাজ পড়াতে অস্বীকৃতি জানান। পরে শেষ বিদায়ের বন্ধু করেরহাট ইউনিয়ন টিম লিডার মাওলানা ইসমাঈল জানাযার নামাজে ইমামতি করেন।
তিনি আরও বলেন, আমি বুধবার সকাল ৬টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসায় যাই বাবার মৃত্যুর খবর দেওয়ার জন্য। তিনি ঘুমে থাকায় দেখা করতে পারিনি। তবে নিরাপত্তা প্রহরীকে বাবার মৃত্যুর বিষয়টি অবহিত করে আসি। পরে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদকে মুঠোফোনে বাবার মৃত্যুর খবর জানাই। তিনি গার্ড অব অনার বিষয়ে ইউএনওকে জানাবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।
করেরহাট ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আবছার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাজেদ উল্লাহর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। আমি নিজেও অসুস্থ হওয়ায় জানাযায় যেতে পারিনি। গ্রামবাসীর বিরোধিতার কারণে পরিবারের লোকজন তাড়াহুড়া করে দাফন করে চলে গেছে বলে শুনেছি।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শেষ বিদায়ের বন্ধুর সমন্বয়ক (সেবা) মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, মো. সাজেদ উল্ল্যাহর দাফন-কাফনে গ্রামবাসী বাধা দেয়। পরে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ও তার ছেলে হোসেন মো. জাহাঙ্গীরের আবেদনের প্রেক্ষিতে লাশের গোসল, জানাযা ও দাফনের কাজটি করে শেষ বিদায়ের বন্ধুর সদস্যরা। যেখানে এই সংগঠনের ক্বারি নোমান, ইসমাঈল বিন মোজাম্মেল, মাওলানা তাজুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মাওলানা মাহমুদ হোসেন, মো. নুরুল আবচার, মো. এরাদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমেদ বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহর লাশ দাফনের জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করার কথা বলা হলেও, তার পরিবারের লোকজন সকাল ৯টায় তাড়াহুড়া করে দাফন করে ফেলে। ফলে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাজেদ উল্ল্যাহকে গার্ড অব অনার দেওয়ার জন্য সকাল ১০টায় সময় নির্ধারণ করা হয়। উনার স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় পরিবারের লোকজন তাড়াতাড়ি করে সকাল ৯টায় লাশ দাফন করে শহরে চলে যায়। সেজন্য তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, লাশ দাফনে গ্রামবাসীর বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনিনি। জানলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিতাম।