অভাব ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জনজীবন পূর্ণ দুঃখ ও হাহাকারে। মানুষের ওপর চেপে বসেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোটক। জীবনধারণের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের অগ্নিমূল্য। চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, চিনি, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে এ রমজানে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের উঠেছে নাভিশ্বাস।
রমজানের শুরুতেই বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। মধ্যবিত্তরা কালেভদ্রে এখন গরুর মাংস কিনতে পারলেও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তা কেবলই দুঃস্বপ্ন। একদিনের আয় দিয়ে চলছেনা একদিনের বাজারও। রমজানে তাও একটু স্বস্তি দিচ্ছে টিসিবির ফ্যামেলী কার্ড। তবে কার্ডসংখ্যা সীমিত হওয়ায় ফ্যামেলি কার্ডের আওতায় আসেনি নিম্ন আয়ের অসংখ্য মানুষ।
বৃহস্পতিবার সকালে মিঠাছড়া বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায় কেজি প্রতি ৮০০ টাকা দরে। প্রথম রমজানের সেহরিতে গরুর মাংস খাওয়ার আশায় অন্যদিনের চাইতে বাড়তি ভিড় লক্ষ্য করা যায় মাংসের দোকানগুলোতে। তবে উর্ধগতির বাজারে পরিবারের চাহিদা ১ কেজি থাকলেও অনেককে দেখা যায় আধা কেজি মাংস কিনতে। এমন সময় বেশ কয়েকবার দর-কশাকশি করে মাংস না কিনে ফিরে গেলো এক ব্যক্তি। তার কিছুক্ষণ পর আবার এসে ঘোরাফেরা করতে থাকে দোকানের আশেপাশে। লোকটার চোখে গরুর মাংশ কেনার স্বপ্ন থাকলেও পকেটে নেই যথেষ্ট টাকা। শেষমেষ অনেক ভেবেচিন্তে আধাকেজি মাংস কিনলেন লোকটা। লোকটির নাম মাহফুজ আলম। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, পেশায় তিনি একজন রিক্সাচালক। সারাদিনে যা আয় করেন তা দিয়ে বাজার করে নিয়ে যান। ছলেমেয়েরা প্রথম রমজান উপলক্ষে গরুর মাংস খাওয়ার আবদার করেছে। কিন্তু এককেজি গরুর মাংস কেনার সামর্থ না থাকায় আধা কেজি মাংস কিনলেন লোকটি।
এদিকে প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম ১১শ টাকা। টানা তিন সপ্তাহ ধরে অস্থির ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২৪০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও রমজানের শুরুতে কমেছে ৪৫-৫০ টাকা। হালিপ্রতি ডিমের দাম ৪৮-৫০ টাকা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসির উদ্দিনের বলেন, আমাদের মতো হিসাব করে চলা মানুষ আর গরুর মাংস খেতে পারবে না। কমদামে ব্রয়লারও এখন কেনা যায় না। মাছের দামও বেড়েছে। আমরা এখন কী খাবো? তিনি বলেন, ইচ্ছা থাকলেও মাছ-মাংস সন্তানের মুখে দিতে পারছি না। হিসাবের বাইরে গিয়ে কিনলে, অন্য খরচে টান পড়ছে। আমার জীবনে সব পণ্যের দাম একসঙ্গে এভাবে বেড়ে যাওয়া কখনো দেখিনি।
মিঠাছরা বাজারের মাংস বিক্রেতা কামাল উদ্দিন বলেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ছাগলের মাংসের দাম ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে। মানুষ মাংস কিনছে কম। বিশেষ করে খাসির মাংসের ক্রেতা একদমই নেই।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাশ-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। আগে বাজারে প্রত কেজি পাঙাশ বিক্রি হতো ১৫০-১৬০ টাকা, যা এখন ১৮০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা। যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেত।
বাজারে সাধারণত গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতারা ব্রয়লার মুরগি ও মাছের ওপর নির্ভরশীল। তাদের মধ্যে অনেকে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মিরসরাই সদরের রিকশাচালক সুজা মিয়া বলেন, একটা দিন যে ভালো-মন্দ খাবো এখন সেই উপায় নেই। এগুলো দেখার কেউ নেই। আমাদের নিয়ে সরকার ভাবে না। দিনে ৪০০-৫০০ টাকা কামাই, এরমধ্যে যদি ২৫০ টাকায় মাছ কিনি, তাহলে অন্য খরচ কি দিয়ে হবে?
অন্যদিকে মুদি বাজারে তেল, চিনি, আটা, ময়দা, গুঁড়া দুধসহ অন্যান্য বেশকিছু পণ্য বাড়তি দামে আটকে রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে ডাল ও ছোলার দাম। প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ৯০-১০০ টাকা ছিল। একইভাবে প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়েছে বুটের ডাল ৯৫-১০০ এবং মাসকলাইয়ের ডাল ১৫৫-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।