নিজস্ব প্রতিনিধি: মিরসরাই উপজেলার কৃষকরা লাভজনক ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন। ভুট্টা এ উপজেলার কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজপাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গরু, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
কম সময়ে ও ভূগর্ভস্ত পানি কম ব্যবহার করতে রবিশস্য আবাদের জন্য কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূল ও ভুট্টায় পোকার আক্রমণ না থাকায় কৃষকরা ভালো ফলনের আশা করছেন।
জানা গেছে অনাবাদি ও এক ফসলী জমিতে ভুট্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেক কৃষক। গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে। পতিত জমিতে ভুট্টা আবাদ করে বাড়তি আয় করছেন তারা। আগামীতে এর পরিধি আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় ১২৫ একর জমিতে ভুট্টা আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে ৮০ একর জমিতে আবাদ হয়েছিল। ভুট্টাতে রোগ ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ অত্যন্ত কম, ফলে উৎপাদন খরচও কম। যে কারণে কৃষকরা ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বর্তমানে অনেক দেশি ও বিদেশি বড় বড় ফিড মিল কারখানা তৈরি হওয়ায় কৃষকদের ভুট্টা বিক্রি নিয়ে তেমন বড় কোন সমস্যায় বা বিপাকে পড়তে হয় না। প্রায় সারা বছর ভুট্টার চাষ করা যায়।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ করেছেন নাহার এগ্রো গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের জমিতে চাষের পাশপাশি অন্য জমি লিজ নিয়ে চাষ করছেন এবং কৃষকদের অনাবাদি ও এক ফসলী জমিতে ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। অনেক কৃষক ভুট্টা চাষ করে ভালো লাভের মুখ দেখেছেন এবং আগামীতে আরো ব্যাপক আকারে এই কৃষিপন্যটি চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ডেইরী শিল্প দ্রুত বাড়ছে। গড়ে উঠেছে বড় আকারের একাধিক খামার। এসব ফার্মে গরুকে খাওয়ানোর জন্য প্রতি বছর অনেক ভুট্টার প্রয়োজন হয়। আগে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ক্রয় করা ভুট্টা দিয়ে প্রয়োজন মেটানো হয়। এখন এখানকার চাষ করা ভুট্টা দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বড় ডেইরী খামার নাহার ডেইরী খামার মিরসরাইয়ে রয়েছে, এজন্য ভুট্টার চাহিদাও বেশি। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন খামারীরা ভুট্টা চাষ করেছেন।
উপজেলার ইমামপুর এলাকার কৃষক হারুন আর রশিদ বলেন, নাহার এগ্রোর এক কর্মকর্তার পরামর্শে এবার ভুট্টার আবাদ করেছি। ভুট্টা আবাদে খরচ তুলনামূলক কম। মাত্র দুবার সেচ দিলেই হয়।
নাহার এগ্রো গ্রুপের জিএম (প্রোডাক্টন) মনোজ কুমার চৌহান জানান, উপজেলার পতিত কৃষিজমি ভুট্টা আবাদের আওতায় আনা হচ্ছে। গরুর খাদ্য হিসেবে আগে আমরা নিজেদের জমিতে ভুট্টা চাষ করতাম এবং বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হতো। এখন কৃষকদের বীজ, সার দিয়ে থাকি এবং উৎপাদন হলে তাদের থেকে আবার ক্রয় করে নিই। এবার প্রায় ২১ একর জমিতে কৃষকরা আমাদের থেকে বীজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করেছেন। আগামী বছর ৫০ একর জমি টার্গেট রয়েছে। আমরা নিজেরাও বেশ কিছু জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। এছাড়া অনাবাদি জমি লিজ নিয়ে আবাদ করছি। অনাবাদি ও এক ফসলী জমিতে ভুট্টা চাষের জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি একাধিক কৃষককে জমির আয়তন অনুযায়ী উৎপাদন খরচ দিয়ে ভুট্টা আবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রতি একর জমিতে ১০ থেকে ১১ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদন হয়। সারা বছরই ভুট্টা চাষ করা যায়। তবে অক্টোবর-নভেম্বরে চাষ করা ভালো। আমরা মূলত এগুলো মিক্সার করে শীতকালে গরুকে খাওয়নোর জন্য রিজার্ভ রাখি। আধুনিক মেশিনের মাধ্যেমে সাইলেজ তৈরি করা হয়।
জানা গেছে, ডেইরী খামারে গো-খাদ্য হিসাবে ভুট্টার গাছ, পাতা, কান্ড ও দানা থেকে পুষ্টিকর সাইলেজ তৈরী হওয়ায় বাড়ছে ভুট্টার আবাদ। যার ফলে শাক-সবজির পাশা-পাশি ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে প্রত্যন্তঞ্চলের কৃষকদের।
মিরসরাই উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, মিরসরাই উপজেলায় ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। আমরাও কৃষকদের ভুট্টা আবাদে উৎসাহ দিচ্ছি। এবার ১২৫ একর জমিতে ভুট্টা করা চাষ হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় আগামীতে এর পরিধি আরো বাড়বে।