ফিরোজ মাহমুদ: দেয়ালে সাঁটা ছেলের ছবি দেখে ডুঁকরে কেঁদে উঠেন মা। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেন ২৬ বছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা ছেলের ছবিটি। মায়ের ছলছল চোখে স্পষ্ট ফুটে উঠে অব্যক্ত আর্তনাদ। ছেলে জাহিদুল ইসলামকে ২৬ বছরে এক মুহুর্তের জন্য ভুলতে পারেনি মা।
সম্প্রতি মিরসরাই উপজেলা প্রাক্তন ছাত্রলীগ পরিষদের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জাহিদুলের স্মরণে দেয়ালে সাঁটা হয়েছে পোস্টার। সে পোস্টার দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেননি নিহত জাহিদুলের মা। ছেলের ছবিতে হাত বুলিয়ে কাঁদছেন মা। সে ছবি ক্যামেরাবন্দী করেন জাহিদুলের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম রয়েল। তার ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে এ হৃদয়বিদারক ছবিটি শেয়ার করা হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে মন্তব্যের ঝড়। মুহুর্তেই ভাইরাল হয় ছবিটি।
পোস্টারে লেখা হয় ১৯৯৬র পাতানো নির্বাচন প্রতিহত করতে গিয়ে মারা যান ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব।
এই আত্মত্যাগে তাঁদের পরিবারের প্রাপ্তি কি, প্রত্যাশা কি জানতে চাইলে পরিবারের সদস্য শহিদুল ইসলাম রয়েল বলেন, বড় ভাই এতটা আহত হননি যে তিনি মারা যাবেন। যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে তাকে মারা যেতে হয়েছে। আমরা পথে বসে গিয়েছিলাম। বাবা বড় দুঃখ নিয়ে মারা গেছেন। বাইরে বাইরে শুনেছি আমরা বহু কিছু পেয়েছি। কিন্তু পরিবারের সদস্য হয়েও আমরা জানি না কি পেয়েছি!
তিনি আরো বলেন, এক সময় এই বাড়ি মুখরিত থাকতো। কিন্তু কেউই আর খোঁজ খবর রাখেন নি। রাখার প্রয়োজনও মনে করেন নি। মায়ের এই কান্না কবে বন্ধ হবে আমরা কেউই জানি না।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতাসীন দল বিএনপি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করলে সকল দল সেই নির্বাচন বর্জন করে। পরবর্তি তিন মাস পর ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দুদিন আগে নির্বাচনী কর্মকান্ডে আহত হন জাহেদুল ইসলাম বিপ্লব। এর একদিন পরেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
মিরসরাই উপজেলা প্রাক্তন ছাত্রলীগ পরিষদের দায়ীত্বশীল সাবেক ছাত্রনেতা ও উপজেলা পৌরসভার মেয়র এম গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিপ্লব একজন ত্যাগী নেতা। সে আমার খুব কাছের একজন সহযোদ্ধা। তাকে হারিয়েছি আমরা দীঘ ২৬ বছর আগে। তবে এখনও আমরা তার শূণ্যতা অনুভব করি। সে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলো। তার এই আত্মত্যাগ আমরা কখনও ভুলতে পারিনা।
তিনি আরো বলেন, আমরা প্রত্যেক বছর আমাদের হারানো সহযোদ্ধা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তারিফ, টিপু, বিপ্লবদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করে আসছি। সেটা হয়েছে উপজেলা কেন্দ্রীক। তবে বর্তমান সময়ের অনেকে এই বিপ্লবের ত্যাগের কথা ভুলে গেছে, আবার অনেকে চিনেও না! আমরা ছিলাম বিপ্লবের সহযোদ্ধা। বিপ্লবের পরিবারের খোঁজখবর রাখা আমাদের দায়ীত্ব। আশা করছি আমাদের নেতৃত্বস্থানীয়দের নজরে আসবে। তার পরিবারের খোঁজ খবর রাখবে।