মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ২৬ তারিখ। আজকের দিবাগত রাত বা রমজানের ২৭তম রাত সাধারণভাবে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত হিসেবে পরিচিত। আভিধানিকভাবে লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানের রাত। পবিত্র কুরআনে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত হিসেবে এই রাতটি আখ্যায়িত হয়েছে। কুরআন মাজিদে একটি সূূরা নাজিল হয়েছে এ প্রসঙ্গে। এতেই ঘোষণা করা হয়েছে লাইলাতুল কদরের মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি। তাফসিরের কিতাবগুলোতে উল্লেখ রয়েছে, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ভেবে অস্থির হচ্ছিলেন যে, আগের নবীর উম্মতেরা দীর্ঘ হায়াত পেত। ফলে তারা অনেক বেশি ইবাদত বন্দেগির সুযোগ পেত। কিন্তু শেষ নবীর উম্মতের হায়াত খুবই সীমিত। অতএব তাদের পক্ষে উচ্চ মর্যাদা লাভের সুযোগ কম। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সূরা নিয়ে উপস্থিত হন হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম। ফলে শান্ত হন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবিরা।
আল্লাহতায়ালা এ রাতেই কুরআন মজিদ নাজিল করেছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তেমনি এ রাতটির মর্যাদা হাজার মাসের চেয়ে বেশি বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু‘ রাত কোনটি তা নির্দিষ্ট করে বলে দেননি। হাদিস শরিফেও নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কোনটি কদরের রাত। নিঃসন্দেহে এতে অনেক রহস্য ও তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন ।
কুরআন মজিদের বর্ণনা অনুযায়ী, এই এক রাতে ইবাদতের বিনিময়ে হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াবের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। হয়তো আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাননি মুসলমানরা একটি রাতের ভরসায় বসে থেকে সারা বছর বা সারা মাস অবহেলায় কাটিয়ে দিক। এ জন্য এটাকে রহস্যময় করে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া পরিশ্রম ও সাধনার মাধ্যমেই মূল্যবান কিছু অর্জন করতে হয় । যে রাতের মূল্য হাজার মাসের চেয়ে বেশি, তা যদি সহজে পাওয়া যেত, তাহলে মানুষ হয়তো এটাকে বেশি গুরুত্ব দিত না। তাই তা অনির্দিষ্ট করে রেখে মানুষকে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। কেউ কেউ রমজানের যেকোনো অংশে এ রাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু বেশির ভাগ মনীষীর মতে রমজানের শেষ দশকেই তা লুকায়িত রয়েছে। আবার কারো কারো মতে, এ রাতের তারিখ পরিবর্তনশীল। কোনো বছর একুশ, কোনো বছর তেইশ, কোনো বছর পঁচিশ, কোনো বছর সাতাইশ, আবার কোনো বছর ঊনত্রিশ তারিখের রাত লাইলাতুল কদর হয়।