নিজস্ব প্রতিনিধি
মিরসরাই ট্র্যাজেডির দশম বর্র্ষ কাল ১১ জুলাই। ২০১১ সালের এদিনে উপজেলা সদর থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুনামেন্টের খেলা দেখে ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার পথে বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কে সৈদালী এলাকায় ট্রাক খাদে পড়ে নিহত হয় ৪৪ জন স্কুল ছাত্র। চলমান মহামরি করোনা ভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে নিহত ছাত্রদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দিবসটি পালন করা হবে। মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী জানান, রবিবার সকালে কোরআন খানি, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ। নিহত ছাত্রদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ ও ‘অন্তিম’ এর স্থলে পুষ্পস্তবক অর্পন। করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য কোন কর্মসূচী এবার পালন করা হচ্ছে না।
মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, প্রাইমারী স্কুলের ৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদ্রাসার ২ জন, প্রফেসর কামালউদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন শিক্ষার্থী ছিলো। এছাড়া একজন অভিভাবক ও দু’জন ফুটবলপ্রেমীও মারা যায়। এক অভিভাবক, ২জন ফুটবলপ্রেমী যুবক সহ ৪৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রচিত হয় মিরসরাই ট্র্যাজেডি। মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে ওই সময় শোকার্ত পরিবারের সাথে দেখা করতে ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সহ দেশ বিদেশের নানা শ্রেণী পেশার বিশিষ্টজনরা। মিরসরাই ট্র্যাজিডিতে সবচেয়ে বেশী শিক্ষার্থী নিহত হওয়া আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’।
৯ বছর ফেরিয়ে গেলেও ছেলে হারানো কিংবা আদরের চোট্ট ভাইটা হারানোর শোক ভুলতে পারছেনা পরিবারগুলো। জুন ফেরিয়ে জুলাই এলেই পরিবারগুলোর হৃদয় কেঁদে উঠে! আদরের শাকিব, নয়ন, উজ্জল, টিটু, ইফতেখার, সাজু, কাজল, জুয়েল, মোবারক, ধ্র্বু নাথ সহ নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠে মায়ানী, মঘাদিয়ার আকাশ বাতাশ।
নিহত ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহেদুল ইসলামের পিতা মীর হোসেন জানান, ছেলে হারানোর শোক এখনও ধুকে দুকে কাঁদায় পুরো পরিবারকে। পরিবারে সে ছিলো বড় ছেলে। তিনি জানান, স্কুল কতৃপক্ষ কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জুলাই এলে ডেকে নিয়ে যায়। সভা-সমাবেশ করে দুপুরে খাওয়ার আয়োজনেই সীমাবদ্ধ থাকে। ওইদিন পার হলে আমাদের খবর রাখেনা আর কেউ।
নিহত ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাখাওয়াত হোসেনের ভাই সোহরাব হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জুলাই এলেই আমাদের ফোনে অথবা বাড়িতে দাওয়াত কার্ড দিয়ে যায়। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাইয়ের নির্দিষ্ট একটি দিন ছাড়া মনে হয় না কেউ বাড়ি এসে আমার মা বাবাকে সান্তনা দিতে কাউকে দেখা যায়নি। শাখাওয়াতের কথা মনে পড়লে মা ভেঙ্গে পড়েন। ছেলে হারানোর শোক কোন ভাবেই সইতে পারছেন না তিনি।
জানতে চাইলে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার বলেন, ১১জুলাইতে যারা মারা গেছে এদের পরিবারের আমাদের সব সময় যোগাযোগ থাকে। তবে ১১জুলাই আসলে বিশেষ আয়োজনে মনে করা হয়। অন্য সময় আমাদের যোগাযোগও থাকে। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা থাকে। অভিভাবকরাও স্কুলে আসেন। সব সময় আমাদের স্বরণে থাকে।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু করোনা ভাইরাসের মহামারির কারনে সরকারিভাবে সভা সমাবেশ নিষেধ আছে সে হিসেবে আমরা এবার কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিনা। সীমিত আকারে কোরআনখানি নিহতদের স্বরণে দোয়া এবং হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য মন্দিরে প্রার্থনা করা হবে।