
হোসাইন ফরহাদ
বিএসআরএম কারখানায় গভীর নলকুপ বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধে দুই মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। রবিবার (৩০ মে) সকালে জোরারগঞ্জের সোনাপাহাড় এলাকায় অবস্থিত বিএসআরএম কারখানার মূল ফটকের সামনে এক মানবন্ধনে এই আল্টিমেটাম দেন তিনি। এছাড়া ১ বছরের মধ্যে কারখানা মিরসরাই ইকোনোমিক জোনে স্থানান্তরের জন্যও হুশিয়ারী দেন সংসদ সদস্য।
গভীর নলকুপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে কারখানার আশপাশের ৮ টি ইউনিয়নে দেখা দেয় তীব্র পানি সংকট। ভুক্তভোগীরা দীর্ঘদিন ধরে এর প্রতিবাদ করে আসলেও বিএসআরএম কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি। পরবর্তীতে বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকনের আয়োজনে মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মিরসরাইয়ের সকল ইউনিয়নের এক হাজারের অধিক নাগরিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএসআরএমকে ২ মাসের মধ্যে ফেনী নদী থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে কারখানায় পানি আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দুই মাস কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকবে। এই সময়ে কোন স্ক্র্যাপ কারখানায় প্রবেশ করবেনা। আগামী ১ বছরের মধ্যে সোনাপাহাড় এলাকা থেকে মিরসরাই ইকোনোমিক জোনে কারখানা স্থানান্তর করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘মিরসরাইবাসী পানির তৃষ্ণায় মরবে, কৃষক সবজি উৎপাদন করতে পারবে না কিন্তু বিএসআরএম রড তৈরি করে ব্যবসা করবে; তা হতে দেয়া যায় না। এই কারখানায় কাঁচামাল ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, বিএসআরএম’র কারখানার জন্য মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলনের কারণে আশপাশের হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, ধুম, করেরহাট, ওসমানপুর, দূর্গাপুর ইউনিয়ন, ও বারৈয়ারহাট পৌরসভা এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
এদিকে মানববন্ধন চলাকালীন সময়ে কারখানার জন্য আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ পণ্যবাহী কয়েকটি ট্রাক কারখানায় প্রবেশে বাধা দেয় আন্দোলনকারীরা। কর্মসূচী শেষ হলেও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে স্ক্র্যাপ পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলো কারখানার পাশ্বে ঢাকা চট্টগ্রাম মাহসড়কে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
বিএসআরএম সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে প্রতিদিন ৪ হাজার মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ পণ্য খালাস করে ২০০ ট্রাক যোগে বিএসআরএমের মিরসরাই কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মানববন্ধনের পর স্ক্র্যাপ পণ্যবাহী ট্রাক কারখানায় প্রবেশ করেনি।
বিএসআএমের নির্বাহী পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, মিরসরাইয়ের অন্যান্য শিল্পকারখানা এবং বাসা বাড়িতেও গভীর নলকূপ রয়েছে। আমরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষন এবং ভাউচারের মাধ্যমে ফেনী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে উৎপাদন পরিচালনা করছি। পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানি আনার জন্য রেলওয়ের অনুমতি এখনো পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র বিএসআরএমকে দোষারোপ করার কোন যৌক্তিক কারণ হতে পারেনা।
বিএসআরএম মিরসরাই কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. দেলোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, কারখানায় ব্যবহারের জন্য প্রতিদিন ৭৫০ কিউবিক মিটার পানির প্রয়োজন। ফেনী নদী থেকে ভাউচারের মাধ্যমে ২৫০ থেকে ২৬০ কিউবিক মিটার পানি সংগ্রহ করা হয়। বাকি প্রায় ৫০০ কিউবিক মিটার পানি ৪ টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। গত ২৪ মে উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকের পর আমরা গভীর নলকূপ বন্ধ রেখে ফেনী নদী থেকে পানি সংগ্রহ করছি।