অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি হওয়া ঘর ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কাজের ধীরগতি, সময় মতো কাজ শেষ না করা, কোথাও কোথাও কাজ শুরু না হওয়া ও কাজের মান নিয়ে এ অসন্তোষ দেখা দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (৯ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন মুক্তিযোদ্ধা ও ঠিকাদারদের সাথে উপজেলা অডিটরিয়ামে মতবিনিময় করেছেন। তবে ঠিকাদারেরা সময় মতো কাজের টাকা না পাওয়ায় কাজে ধীরগতির কথা মতবিনিময় সভায় স্বীকার করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৯ টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২১ টি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রতিটি ৩৩ ফুট বাই ২২ ফুট ঘর নির্মানের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। উপজেলায় ২৮ জন ঠিকাদার ঘরগুলো নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায়। প্রতি ঠিকাদার ৮-৯ টি করে ঘরের কাজ পায়। জানা গেছে, গত ৩১ ডিসেম্বর ঘর গুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কোন কোন ঠিকাদার নির্মাণ কাজ শুরুই করতে পারেনি। আবার কোন কোন ঠিকাদারের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে থাকলেও তারা কাজের কোন টাকা পাননি। ফলে কাজের বাকি অংশ শেষ করতে পারছেন না।
মায়ানী ইউনিয়নের সৈদালী এলাকার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মো. মহিউদ্দিন জানান, বীর নিবাস নির্মাণের জন্য প্রায় ৫ মাস আগে পুরাতন ঘর ভেঙ্গে জায়গা খালি করে রেখেছেন। কিন্তু ঠিকাদার ঘর নির্মাণের কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। পুরাতন ঘর ভেঙ্গে ফেলায় তাদের বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। শুধু তার ঘর নয়, মায়ানী ইউনিয়নের ১৪টি ঘরের মধ্যে একটি ঘরেরও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন। করেরহাট ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম জানান, তার ঘরের নির্মাণ কাজ অর্ধেক করে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর ঠিকাদার কোন কাজ করছে না। ধুম ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মহসিন অভিযোগ করেন, ধুম ইউনিয়নের ৯ টি ঘর নির্মাণ করার কথা থাকলেও একটি ঘরের নির্মাণ কাজও শুরু হয়। মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, এস কে এন্টারপ্রাইজ ও আরাফাত ষ্ট্রীল এন্টারপ্রাইজ ছাড়া অন্যসব ঠিকাদার কমবেশি কাজ শুরু করেছে। কাজ শুরু না করা দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১৮টি ঘরের নির্মাণ কাজ পায়। এস কে এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার মো.ফাহিম জানান, মিস্ত্রি না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারেননি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি কাজ শুরু করবেন। অনিক ট্রেডার্সের কামাল উদ্দিন বিটু জানান, তিনি খইয়াছড়া ও মঘাদিয়া ইউনিয়নের ৯টি ঘর নির্মাণ কাজ পান। ৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একটি ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা দিতে পারছে না। ঘরের নির্মাণ কাজে প্রায় ৬০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এখনও কাজের এক টাকা বিলও পাননি। আলী এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ আলী দিদার জানান, তিনি ৯ টি ঘরের মধ্যে ৩ টির কাজ প্রায় শেষ করছেন এবং আরো ৫টি কাজ চলমান। কিন্তু বিল জমা দিলেও কোন টাকা পাননি। গাজী বিল্ডার্স ও শাহজাহান কন্সট্রাকশন এর মো.শাহজাহান অভিযোগ করেন, বীর নিবাস নির্মাণে ঘরের লিন্টেল পর্যন্ত কাজ শেষ হলে মোট বরাদ্দের ২৫ শতাংশ টাকা ছাড় দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু কোন কোন ঠিকাদার তাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এলেও কোন টাকা পায়নি। ফলে ওই ঠিকাদারের অন্য কাজগুলো আটকে গেছে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার কবির আহম্মদ জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘরের যে নকশা করেছে তা সন্তোষজনক নয়। ঘরের ছাদের বাহিরে কোন কার্নিশ রাখা হয়নি। ফলে বর্ষায় সময় বৃষ্টির পানি ঘরের দেওয়াল বেয়ে পড়ে ঘরে পানি প্রবেশ করতে পারে। তিনি ঠিকাদারদের বিল না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠিকাদারেরা বিল না পেলে কাজ করবে কেন। ঠিকাদারদের বিল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেন।
উপজেলা ঠিকাদার সমিতি সাধারণ সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ দিদার জানান, ঠিকাদাররা সঠিক সময়ে কাজের বিল না পাওয়ায় বীর নিবাস নির্মাণের কোথাও কোথাও ধীরগতিতে কাজ চলছে। কাজের বিল পেলে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর নির্মাণ কাজের ঠিকাদারদের বিল পাওয়ার বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন। ঘরগুলো নির্মাণ কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সে বিষয়েও তিনি ঠিকাদারসহ সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।