ফেনী নদীতে চলছে মুহুরী সেতু নির্মাণ, অগ্রগতি ৪২ শতাংশ

top Banner

মোহাম্মদ ইউসুফ

চট্টগ্রামের সাথে সড়ক পথে সোনাপুর (নোয়াখালী) ও সোনাগাজী (ফেনী) উপজেলার যোগাযোগের সুবিধার্থে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ফেনী নদীতে মুহুরী সেতু নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ইতমধ্যে সেতুর ফাইলিংয়ের কাজ ৯০% ও সার্বিক কাজ ৪২% সম্পন্ন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুটি নির্মান কাজ শেষ হলে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা, লক্ষীপুর জেলা ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দাদের আন্তঃমহাসড়কে চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগের নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

মুহুরী সেতু নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম জেলার সাথে বৃহত্তর নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার প্রায় ৫০ কিলোমিটার এবং ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়ক যোগাযোগে দুরত্ব কমে আসবে। এতে করে সড়ক পথে ২ ঘন্টা কম সময়ের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসতে পারবেন সোনাপুর ও সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দারা।

সেতুটি নির্মাণের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহৃত হবে সোনাপুর (নোয়াখালী)-সোনাগাজী (ফেনী)- জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) সড়কটি। এতে করে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সাথে সম্প্রসারিত হবে সোনাপুর উপজেলা ও সোনাগাজী উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য। এছাড়া সোনাগাজী অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কক্সবাজার থেকে আসা মেরিন ড্রাইভে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে সেতুটি।

সওজ ফেনী জেলা সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক ও ফেনী জেলার সোনাগাজী সড়কের সাথে সংযোগ করে ফেনী নদীর উপর মুহুরী সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে হাসান টেকনো বিল্ডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩৯১ মিটার, প্রস্থ ১০.২৫ মিটার, ৯টি স্প্যানে ৮টি পিলার, ২টি এ্যাপার্টমেন্ট হবে। মোট ফাইলিং হবে ১২৮টি। প্রতিটি ফাইলিং ৩৮ মিটার থেকে ৪৮ মিটার পর্যন্ত গভীর করা হয়েছে। প্রতি স্প্যানে ৫টি করে মোট ৪৫টি গার্ডার বসানো হবে। সেতুর কাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। নির্মাণ সময় ধরা হয়েছে ১৮ মাস।

সরেজমিনে মুহুরী সেতুর নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে দেখা যায়, সেতুর দুই পাশে ২’শ মিটার করে ৪’শ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় শতাধিক শ্রমিক সেতুর বিভিন্ন অবকাঠামো কাজ করছেন। নদীর মাঝখানে ফাইলিং করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ভাসমান ব্রীজ। দিন রাত প্রায় শতাধিক শ্রমিক সেতু নির্মাণে কাজ করছেন। ফাইলিং বাকী আছে মোট ১০টি। ৫টি পিলারের বেজ ঢালাই হয়েছে। ইতমধ্যে ২টি গার্ডার তৈরী করা হয়েছে। সেতুর জন্য ইতমধ্যে দুই পাশে ৪’শ মিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের কেউ গার্ডার তৈরী, কেউ ফাইলিংয়ের জন্য রড়ের ওয়েল্ডিং কেউবা ঢালাইয়ের কাজ করছেন। তাদের তদারকি করছেন সওজের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত প্রকৌশলীরা। তবে সেতুর নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের শরীরে ছিলোনা কোন নিরাপত্তা সরঞ্জাম। নদীর মাঝখানে নির্মিতব্য সেতুর নির্মাণ শ্রমিকরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। ফলে যেকোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) ফেনী জেলার উপ-সহকারি প্রকৌশলী এবং মুহুরী সেতুর প্রকল্প পরিচালক মাজহারুল হক বলেন, মুহুরী সেতুটি নোয়াখালী জেলার সোনাপুর সড়ক ও ফেনী জেলার সোনাগাজী সড়ক এর সাথে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ সড়কের সংযুক্ত ঘটাবে। এতে করে সোনাপুর ও সোনাগাজীর বাসিন্দারা প্রায় ২ ঘন্টা কম সময়ের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া সোনাপুর (নোয়াখালী)-সোনাগাজী (ফেনী)- জোরারগঞ্জ (চট্টগ্রাম) ২ লেইন বিশিষ্ট সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার হবে। সড়কটি ভবিষ্যতে ৪ লেইন করার পরিকল্পনা রয়েছে সওজের। নোয়াখালী জেলার চৌরাস্তা পর্যন্ত ইতমধ্যে ৪ লেইনের কাজ চলতেছে। সেতুটি নির্মাণ করা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সোনাগাজী অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতায়াত সুবিধা বাড়বে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, মুহুরী সেতুর ফাইলিংয়ের কাজ ৯০% আর সেতুর সার্বিক অগ্রগতি ৪২%। এখনো ১০ টি ফাইলিংয়ের কাজ বাকী রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে প্রায় ৭৫% কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটি দিয়ে গাড়ী চলাচল করবে বলে আশা করা যায়।

মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সড়ক পথে যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে মিরসরাই উপজেলা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিরসরাইয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। যার বৃহৎ অংশ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে নিয়ে। কক্সবাজার থেকে আসা মেরিন ড্রাইভ সড়ক মুহুরী প্রজেক্ট পর্যন্ত যাবে। রামগড়ে নির্মানাধীন স্থলবন্দরে যাতায়াতের জন্য জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক ব্যবহৃত হবে। এছাড়া মুহুরী সেতু ব্যবহারের মাধ্যমে নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলা ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দারা খুব দ্রæত সময়ে মেরিন ড্রাইভ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসতে পারবে। এতে করে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক ও দৈনন্দিন জীবনের ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। মুহুরী সেতু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সোনাগাজী অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

আরো খবর