নৌকা তৈরি করে সংসার চলে ক্ষুদিরামদের

top Banner

কখনো নতুন কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী অথবা নৌকা মেরামত করাই তাদের জীবন জীবিকার উৎস। বছরের ৭ মাস পুরোদমে কাজ চললেও বাকী ৫ মাস তেমন কাজ থাকেনা । ৭ মাসের আয় দিয়ে চালিয়ে নেন অন্য মাসগুলো। নৌকাতেই যেন তাদের জীবন জীবিকা। ক্ষুদিরাম দাস, নেপাল দাস, নিরাময় দাস, সহ অন্তত ১০ জন মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ও ওচমানপুর এলাকায় নৌকার কারিগর হিসেবে কাজ করেন।
সরেজমিন উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এক একজন কারিগর তাদের সহযোগীদের নিয়ে নৌকা তৈরীর কাজে ব্যস্ত। পঞ্চাশোর্ধ ক্ষুদিরাম দাস জানান, প্রায় দুই যুগ যাবৎ তিনি নৌকা তৈরী ও মেরামতের সাথে জড়িত। ছোট একটি নৌকা তৈরী করতে তিনি ১০ হাজার টাকা মজুরী নেন। ছোট সাইজের একটি নৌকা তৈরী করতে তার সময় লাগে ৮ দিন। প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয় তার। তিনি বলেন, এখন এখানে অনেক মৎস্য প্রকল্প গড়ে উঠেছে। প্রকল্পে খাদ্য দেয়ার জন্য নৌকা ব্যবহার করতে হয়। তাই অগের তুলনায় কাজ বেড়েছে।
সাহেরখালী এলাকার নিরাময় দাশ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, সমুদ্র থেকে মাছ ধরার জন্য এক সময় স্থানীয় ভাবে তৈরী মেহগনী গাছের তৈরী নৌকা ব্যবহার হতো। এখন স্ক্রাপ জাহাজ থেকে নিয়ে আসা গাম বোটের কারনে স্থানীয় ভাবে তৈরী নৌকার চাহিদা কমে যাচ্ছে। তারপরও পেশা ধরে রেখেছি।
আরেক নৌকার কারিগর নেপাল দাস বলেন, ৫০ ফুট সাইজের একটি নতুন নৌকা তৈরী করতে তিনি ১৫ হাজার টাকা মজুরী নিচ্ছেন। মেহগনী গাছ দিয়ে নৌকাটি তৈরী করতে মোট খরচ হবে ৮০ হাজার টাকা। তাদের তৈরীকৃত নৌকা সাহেরখালী এবং ডোমখালী স্লুইচ গেইট দিয়ে সাগর থেকে মাছ আহরনের কাজে ব্যবহৃত হয়। আবার কোম্পানীগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও নৌকার অর্ডার পান তারা। তবে মিরসরাইয়ে শিল্পনগর গড়ে উঠায় মাছ ধরা অনেক কমে গেছে। এতে করে নৌকার ব্যবহার কমছে।
শ্রীধাম দাস জানান, গাম বোটের কারনে স্থানীয় ভাবে তৈরী নৌকার চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো তারা নৌকা তৈরীর কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নৌকা তৈরীর এই শিল্পের সুনাম দেশে ছড়িয়ে যাবে।
কৃষ্ণ জলদাস জানান, আমরা নদী থেকে মাছ আহরনের জন্য মেহগনী গাছের তৈরী নৌকা ব্যবহার করি। এসব নৌকা অনেক টেকসই। সরকার যদি নৌকার কাগিরদের ঋন সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে সহযোগীতা দিয়ে থাকে তাহলে এই পেশাার পরিধি আরো বাড়বে।
৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুল হক বলেন, আমার এলাকার জলদাশ পাড়ার অনেক নৌকা তৈরির পেশায় জড়িত রয়েছে। অনেক সময় নৌকা তৈরি ও মেরামতের জন্য তারা এলাকার বাইরেও যান। নৌকার কারিগর হিসেবে তাদের বেশ সুনাম রয়েছে।

আরো খবর