সেডন পার্কের শেষ দৃশ্যটা দিয়েই শুরু করা যাক। চাইলে অবশ্য ছবিটা এখনই এনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের ‘সংগ্রহশালায়’ জুড়ে দেওয়া যায়। ইনিংসের একদম শেষ ওভারে নাহিদা আক্তারের বলে প্রথম রানটা নিলেন ফাতিমা। এরপর কোনোরকমে বলটা কুড়িয়ে নিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এরপর নিশ্চিত হলো পাকিস্তানের হার।
সংগ্রহশালার জন্য তৈরি হলো ঠিক পরের ছবিটা। উল্লাসে ফেটে পড়ছেন কেউ, মুখজুড়ে স্নিগ্ধ হাসি। সতীর্থকে জড়িয়ে ধরে কেউ ভাগ করতে চাইছেন আনন্দ। এরপরই কোমর দুলিয়ে নাচ। এমন উৎসব তো আজ তাদেরই সবচেয়ে বেশি মানায়। বিশ্বকাপের প্রথম জয় বলে কথা! তাও পাকিস্তানের বিপক্ষে।
ম্যাচের তখনও তিন ওভার বাকি। টিভি পর্দায় দেখা গেল লাল-সবুজের পতাকা উড়ছে। নিউজিল্যান্ডে ওড়া ওই পতাকা যে বাংলাদেশের, সেটা বলার প্রয়োজন আছে বলে বোধ করি না। কেন উড়ছে? বাংলাদেশের মেয়েরা প্রথম বিশ্বকাপ খেলছে তাসমান সাগর পাড়ে।
কিন্তু এই খোঁজটা ক’জন রাখেন! না রাখলেও অবশ্য কিছু আসে যায় না নিগার সুলতানাদের। আড়ালে থাকা মেয়েরা এবার আলোয় বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ জিতে। সোমবার পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়ে এসেছে এই জয়।
নিভৃতে দিন কাটে তাদের। ম্যাচ ফির জন্য আলোচনায় আসা হয় মাঝেমধ্যে অথবা এশিয়া কাপ জয়ের মতো সাফল্যে। কিন্তু নিজেদের কাজটা যারা ঠিকঠাক করে যেতে পারেন, তাদের আলোচনায় না রেখে উপায়ই বা কী!
এই জয় যেন ফিরিয়ে এনেছে ২৩ বছর আগের স্মৃতি। ছেলেদের বিশ্বকাপের জয়টাও এসেছিল এই পাকিস্তানের বিপক্ষে। আকরাম খানরা জিতেছিলেন বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচে, নিগার সুলতানাদের বেলায়ও তাই। মিল আছে আরও। দুটি ম্যাচই টস হেরেছিল বাংলাদেশ, ম্যাচগুলো হয়েছে সোমবার।
বাংলাদেশের পক্ষে ইতিহাস লেখার শুরুটা করেছিলেন শারমিন সুলতানা ও শামিমা সুলতানা। এই দুজনের উদ্বোধনী জুটিতে এসেছিল ৩৭ রান। শারমিন ৩০ বলে ১৭ রান করে সাজঘরে ফেরত গেলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
৬ চারে ৫৫ বলে ৪৪ রান করে হাফ সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়েন আরেক ওপেনা র শামিমা। একই আক্ষেপে নিয়ে আউট হন অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতিও। ৬৪ বলে তার ব্যাটে আসে ৪৪ রান। তবে বাংলাদেশের বড় ইনিংসের বড় কৃতিত্বটা ফারজানা হকের।
৫ চারে ১১৫ বলে ৭১ রান করেন তিনি। নির্ধারিত ৫০ ওভার ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান করে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের এটাই সবচেয়ে বড় সংগ্রহ। পাকিস্তানের পক্ষে ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন নাসরা সান্ধু।
বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল হতাশার। কোনো উইকেট না হারিয়েই ৯১ রান করে ফেলে পাকিস্তান। চিন্তা বাড়ে বাঘিনীদের। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানো যে এই মেয়েদের নেশা। নাহিদা খানকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন রুমানা আহমেদ।
এরপর অধিনায়ক বিসমাহ মারুফকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের মুঠো থেকে ধীরে ধীরে ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছিলেন সিদরা আমিন। মাঝে কয়েকটি সহজ ক্যাচ মিস শঙ্কা বাড়াচ্ছিল আরও বেশি। কিন্তু বিসমাহকে শারমিন আক্তারের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে স্বস্তি দেন জাহানারা আলম। এরপর শুরু হয় উইকেট যাওয়ার মিছিল।
৪৪তম ওভারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় একেবারেই ঘুরিয়ে দেন ফাহিমা খাতুন। এরপর আর কখনোই মনে হয়নি ম্যাচটা যেতে পারে বাংলাদেশের বিপক্ষে। হয়ওনি সেটি। সেডন পার্কে ইতিহাসটাই গড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ।