মোহাম্মদ ইউসুফ
মিরসরাইয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল চোর চক্র। উপজেলায় প্রতিরাতে কোন না কোন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটছে। কখনো কখনো একসাথে দুটি বা তিনটিও মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে।
গত দুই মাসে উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরির খবর পাওয়া গেছে। দুই একটি উদ্ধার হলেও বেশির ভাগ মোটরসাইকেলের হদিস পাওয়া যায়নি। আইনী জটিলতার কারণে অনেকে থানায় অভিযোগ বা মামলা করেন না। আবার কেউ কেউ থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরও মোটরসাইকেল ফিরে পাননি।
চলতি মাসে চুরির সময় চোরদের হাত থেকে দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে সক্ষম হয় মিরসরাই থানা পুলিশ। তবে এসময় চোরদের ধাওয়া করার পরও আটক করা যায়নি। প্রতিনিয়ত মোটরসরাইকেল চুরি
হওয়ায় ও চোরচক্রের কাউকে সনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী অনেকে।
সর্বশেষ গত ১১ আগষ্ট মিরসরাই পৌর সদরে মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে। ১১ আগস্ট বুধবার ভোর রাতে মিরসরাই পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিয়া বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। মোটর সাইকেল চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগীর বড় ভাই মনোয়ার হোসেন মিলন বাদী হয়ে বুধবার বিকেলে মিরসরাই থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
মনোয়ার হোসেন মিলন বলেন, বুধবার রাত আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে ঘরের আঙ্গিনায় আমার ভাই ইমাম হোসেনের পালসার ব্রান্ডের মোটর সাইকেলটি অজ্ঞাত চোরের দল নিয়ে যায়। মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ফেনী ল- ১১-৩১০৫। গাড়ির কাগজপত্র গাড়ির সাথে থাকায় সেটিও নিয়ে যায় চোরের দল।
গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) ভোর সাড়ে ৩টায় উপজেলার ফেনাফুনি এলাকার মো. সাইফুল্লাহ প্রকাশ হাকিম সাহেবের বাড়ি থেকে এক সাথে দুটি মোটরসরাইকেল চুরি করে চোরের দল। একটি মো. সাইফুল্লাহ নিজের অন্যটি তার জামাতা সাইফুলের। তারা থানায় চুরির ডায়েরি করতে গেলে জামাতা সাইফুলের গাড়িটি থানা হেফাজতে সনাক্ত করেন কিন্তু অন্যটি পাওয়া যায়নি।
মিরসরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল উদ্দিন বলেন, দুটি মোটরসাইকেল চোরের দল মহাসড়কের বাদামতলি এলাকায় নিয়ে চালু করার চেষ্টা করে। হাকিম সাহেবের মোটরসাইকেলটি চালু হলেও জামাতা সাইফুলের মোটরসরাইকেলটির লক ভাঙ্গার পরও চালু হয়নি। চোরের দল পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চালু হওয়া মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় আর অন্যটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখা হয়।
গত ৭ জুলাই সড়ক ও জনপদের ডাকবাংলো থেকে সাংবাদিক আশরাফ উদ্দিনের ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল। চোরের দল তাকে দরজার বাহির থেকে বন্ধ করে করে দিয়ে মোটরসরাইকেল টি চোখের সামনে থেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুজিবুর রহমানকে জানালে, তিনি অভিযান চালিয়ে পাত্তার পুকুর এলাকা থেকে এক ঘন্টার মধ্যে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন। তবে এই ঘটনায় কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত জুন মাসে মিঠানালা মাষ্টার বাড়ি থেকে চুরি হয় একটি পালসার মোটার সাইকেল। মোটরসরাইকেলের চালক হিমেল চুরির বিষয়টি বুঝতে পেরে বাড়িতে থাকা অন্য দুটি মোটর সাইকেল নিয়ে পিছু নেয়। তাড়া করতে করতে উপজেলার সাধুর বাজার এলাকায় টহল পুলিশের সামনে মোটরসাইকেলটি ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় চোরের দল। সেই ঘটনায় থানা পুলিশ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে তবে কাওকে সনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি।
এছাড়া একই সময় ওই এলাকায় একাধিক গাড়ি চুরি হলেও কোন গাড়ির হদিস বা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে মিলন নামে এক ব্যক্তির একটি গাড়ি চুরি হলে স্থানিয়দের সহযোগীতায় এক চোরকে আটক করে স্থানীয় ১০ নং মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদে বিচার করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মিরসরাই পৌরসভার তারাকাঠিয়া এলাকার নুর ইসলামের ১টি, মেজবাহ উদ্দিনের ১টি, নেজাম উদ্দিনের ১টি সহ মোট চারটি মোটর সাইকেল গত তিন মাস আগে চুরি হলেও এগুলোর একটিরও হদিস পাওয়া যায়নি।
উপজেলার আবুরহাট এলাকার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমার একা তিনটি গাড়ি চুরি হয়েছে একের পর এক। আমাদের এলাকা হতে গত কয়েক মাসে চুরি হওয়া ১৫টি গাড়ির জিডির নথি সার্কেল এএসপি লাবিব আব্দুল্লাহর হাতে দিয়ে এসেছি। আমরা রাতে ঘুমাতে পারিনা মোটরসরাইকেল চুরির ভয়ে, কখন কার মোটরসাইকেল চুরি হয়ে যায় সেই আতঙ্কে আছি।
সহকারি পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) লাবিব আব্দুল্লাহ বলেন, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় কেউ মামলা না করায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারছি না। ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫টি জিডি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। মোটরসাইকেল চোর চক্রদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। মোটরসাইকেল চুরির সাথে সম্পৃক্ত কাউকে সন্দেহ হলে তার নাম-পরিচয় পুলিশের কাছে জমা দেওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।