নিজস্ব প্রতিবেদক: মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের নতুন নির্দেশনা মানতে হবে। গাইড ছাড়া ঝরনায় যাওয়া যাবে না। প্রতিটি ঝরনার মুখে বসানো হচ্ছে সিসি ক্যামেরা। ঝরনাগুলোতে প্রাণহানির মত ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে সীদ্ধান্তগুলো নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সম্প্রতি বনবিভাগ, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, ইজারাদার, জনপ্রতিনিধিদের সাথে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
সভায় মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের মিরসরাই রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহেনশাহ নওশাদ, বারৈয়াঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আলতাফ হোসেন, দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব, খৈয়াছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু, মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স ষ্টেশনের ষ্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি, ঝরনা ইজারা প্রতিনিধি নাজমুল হাসান, আশরাফুল কামাল মিটু উপস্থিত ছিলেন।
পাহাড়ি ঝরনায় যেতে যে নির্দেশনা মানা প্রয়োজন
সাথে গাইড নেয়াঃ ঝরনায় যাওয়ার সময় সঙ্গে স্থানীয় অভিজ্ঞ গাইড নিতে হবে। ঝরনার প্রবেশপথে টিকিট কাউন্টারে ইজারাদার ও বন বিভাগ অনুমোদিত গাইড পাওয়া যাবে। খরচ হবে ৪০০-৫০০ টাকা। তাঁরাই পাহাড়ি পথে দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে সহায়তা করবেন, ঝরনায় নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দেবেন।
ছবি তুলতে সতর্ক থাকা: ঝরনার খাড়া ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেকের মধ্যে ছবি তোলার প্রবণতা আছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়েন অনেকে। এতে দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়।
গভীর কূপের অজানা রূপ: মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলোতে এক বা একাধিক কূপ রয়েছে। এসব কূপ কলসি আকৃতির। ওপরে ছোট মুখ আর ভেতরটা বড় ও গভীর। এসব কূপে কোনোভাবেই নামবেন না।
সাইনবোর্ড টাঙানো স্থানে না যাওয়া: ঝরনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যেতে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে বনবিভাগ ও ইজারাদারের পক্ষ থেকে। পর্যটকদের উচিৎ ওই স্থানে না যাওয়া।
সাঁতার না জানলে: ঝরনার নিচের অগভীর কূপগুলো অনেকটাই নিরাপদ। ঝরনার পানিতে ভিজে আনন্দ করেন পর্যটকেরা। তবে বিপদ এড়াতে সাঁতার না জানলে এসব অগভীর কূপেও নামবেন না।
ঢাল বেয়ে ওপরে না উঠা: পাহাড়ি ঝরনার ঢালগুলো পিচ্ছিল হয়ে থাকে। পর্যটকেরা এসব ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন। সামন্য ভুলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই ঝরনারগুলোর খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠবেন না।
ভারি বৃষ্টির সময় না যাওয়া: মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ঝরনায় যাওয়ার পথ উঁচু-নিচু। ভারি বৃষ্টির সময় এসব পথ খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। আর ভারী বর্ষণের সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তীব্র স্রোত তৈরি হয়। এ সময় ঝরনায় ভ্রমণ খুব বিপজ্জনক।
নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নেয়া: স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ঝরনা এলাকায় যাওয়ার পর অনেক সময় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এমন অবস্থায় পর্যটকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে তীব্র স্রোতের মধ্যে এক পাশ থেকে অন্য পাশে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এমন অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে অবস্থান নিন। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চাইতে পারেন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, পর্যটন স্পটগুলোকে পর্যটকবান্ধব করতে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন সীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গাইড ছাড়া পর্যটক যেন ঝরনায় যেতে না পারে তা নিশ্চিত করা, সিসি ক্যামরা স্থাপন পর্যটন এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন, ইজারা নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়েও জেলা মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে।
জানা গেছে, পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনায় অসতর্কতার কারণে ঝরে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। সন্তান হারা হচ্ছে মা-বাবা। নিঃস্ব হচ্ছে অনেক পরিবার। শুধুমাত্র সতর্ক হলে এসব দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গত ৬ বছরে পাহাড়ি ঝরনায় মারা গেছে ১৬জন পর্যটক। আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে নজরকাড়া প্রাকৃতিক ঝরনার কারণে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝরনা দেখার জন্য এখানে ছুটে আসছেন শত শত পর্যটক। উপজেলার আটস্তর বিশিষ্ট খৈইয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া, সহ¯্রধারা, সোনাইছড়ি, বোয়ালিয়া, মহামায়া, বাওয়াছড়া, রূপসী ঝরনা, হরিণাকুন্ড ঝরনা নজর কেড়েছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের। অনেক সময় এখানে আনন্দ করতে এসে লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। আনন্দ বিষাদে পরিণত হচ্ছে।
সর্বশেষ গত ২ জুলাই উপজেলার বড়কমলদহ রূপসী ঝরনার কূপে পানিতে ডুবে নিহত হয়েছেন দুই বন্ধু চট্টগ্রাম শহরের আকবরশাহ থানার ফিরোজশাহ কলোনীর মোহাম্মদ জামিলের ছেলে নুরুল আবছার ও মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আরিফ। গত ৬ বছরে এভাবে ১৬ জন পর্যটক ঝরনায় পড়ে নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত হয়েছে আরো শতাধিক পর্যটক।