চলমান রিপোর্ট: পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ে ভয়াবহ ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার পর কিছুদিন ধরে বিভিন্ন লেভেল ক্রসিং নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখা গেলেও এক বছর না যেতে ফের আগের চিত্র দেখা গেছে খৈয়াছড়া লেভেল ক্রসিংয়ে।
সরেজমিনে গিয়ে খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ে গিয়ে দেখা যায়, লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করেন ৩ জন গেটকিপার। ৮ ঘন্টা করে দায়িত্বে থাকেন তারা। এরা হলেন সাগর দাশ, রিপন চন্দ্র দাশ ও মেহরাজ হোসাইন।
গেটকিপার সাগর দাশ জানান, ট্রেন আসার সিগনাল পেয়ে অনেক সময় গেটবার ফেলার পরও অনেকে গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। বড় ধরনের দুর্ঘটনার পরও শিক্ষা হয়নি। বিশেষ করে বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে কিছু উশৃঙ্খল। তবে স্থানীয় সিএনজি-অটোরিক্সা চালকরা সচেতন রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ঝরনা সড়ক ছোট হওয়ায় অনেক সময় উভয় পাশের গাড়ির কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। সড়কটি আরো বড় করা হলে ভালো হতো। প্রতিদিন কয়েকশ গাড়ি রেললাইন পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে যায়। ঈদের সময় অথবা অন্য ছুটিতে ৫০০ থেকে ৭০০ গাড়িও চলাচল করে থাকে।
সাগর আরও বলেন, লেভেল ক্রসিংয়ে থাকা ল্যান্ডফোন বিকল রয়েছে অনেক দিন ধরে। কলিং বেলও নষ্ট। এগুলো কখন ঠিক হবে বলতে পারছিনা।
আরেক গেটকিপার মেহরাজ হোসাইন বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ট্রেন যাওয়ার সময় ট্রেনের সঙ্গে ছবি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তখন যেকোন ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা থাকে। আমরা নিষেধ করলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়।
পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকার বাসিন্দা মো. শামসুল আলম বলেন, চোখের সামনে সেদিনের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা আজো ভূলতে পারিনি। দৃশ্যপট মনে উঠলে বুকটা কেমন জানি করে। মুহুর্তের মধ্যে এতগুলো তাজা মানুষ লাশ হয়ে গেলো।
তিনি আরো বলেন, এখানে আসা অনেক পর্যটকের শিক্ষা হয়নি, গাড়িতে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে রেল লাইন অতিক্রম করে। গেটকিপার গেটবার ফেলার পরও অনেক মোটরসাইকেল আরোহী জোর করে চলে যেতে চায়।
মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া রেলওয়ে ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার মো. শামছুদ্দোহা বলেন, আসলে ওই এলাকাটি আমার এরিয়ার বাইরে। তারপরও আমি বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করবো। ওই দুর্ঘটনার পর থেকে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে।
সীতাকু- রেওলওয়ে পুলিশ ফাড়িঁর ইনচার্জ এসআই খোরশেদ আলম বলেন, গতবছর এই দিনে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ে ভয়াবহ ট্রেন-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার পরপরই গেটকিপার সাদ্দামকে আটক করা হয়েছিলো। এরপর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে সাদ্দামের অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে।