এম মাঈন উদ্দিন: কোরবানিকে ঘিরে মিরসরাইয়ে ৫৮ হাজার গরু প্রস্তুত করেছে স্থানীয় খামারিরা। এসকল গরু স্থানীয় কোরবারির পশুর চাহিদা মিটিয়ে উপজেলার বাইরেও পাঠানো যাবে বলে দাবী খামারিদের। এবছর মিরসরাইয়ের কোরবানির পশুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার। সে তুলনায় আরো ১৬ হাজার গরু বেশি প্রস্তুত করেছে মিরসরাইয়ের ৩ শতাধিক ছোটবড় খামারীরা।
পর্যাপ্ত পরিমান গরু প্রস্তুত থাকলেও প্রতি বছরের মতো উপযুক্ত দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে খামারীদের ভেতর দেখা যায় শঙ্কা। খামারীরা জানায়, তারা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋন নিয়ে এসকল গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার তুলনামূলক বেড়েছে খাদ্যের দামও। তাই উপযুক্ত দাম পাওয়ার বিষয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন খামারীরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, কোরবানীকে ঘিরে খামারি ও প্রান্তিক কৃষক মিলে এবার ৫৭ হাজার ৬৮০টি গরু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ৪০ হাজার ৪৫৭টি ষাঁড় ও বলদ, ১ হাজার ৩৪০টি গাভী, ৫ হাজার ৪৯২টি মহিষ, ৬ হাজার ৬৮৫টি ছাগল ও ৩ হাজার ৭০৬টি ভেড়া রয়েছে। পশু কেনাবেচার জন্য উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ২ পৌরসভায় ৩১টি স্থায়ী অস্থায়ী বাজার রয়েছে।
প্রতি বছর কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন। দেশে গত তিন বছর ভারত থেকে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিল। তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকরা। তবে এ বছরও ভারতীয় গরু না আসলে বেশ লাভবান হবে এমনটাই আশা করছেন তারা।
উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ৩১ টি হাটে গবাদিপশু বেচাকেনা হয়। ৩১ টি হাটের মধ্যে উপজেলার মিরসরাই বাজার, বড়তাকিয়া, মিঠাছরা, জোরারগঞ্জ, বারইয়ারহাট, আবুতোরাব গরুরবাজারগুলো বড়। এসব বাজারে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু ক্রয় করে ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রয় করে। এছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে তা বিভিন্ন বাজারে বিক্রয় করে। বর্তমানে এ উপজেলার প্রায় ৩ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এ পেশায় রয়েছে। খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি ইনকামের জন্য বাড়িতে একটি দুইটি করে গরু মোটাতাজা করে। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটি গরু ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকায় বিক্রয় করেন এখানকার গবাদিপশুর খামারি ও কৃষকরা।
জানা গেছে, এবার কোবানির জন্য সবচেয়ে বেশি গরু প্রস্তুত করেছে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের তাজপুরে অবস্থিত দিদার এগ্রো ফার্মে।
দিদার এগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারি নাসির উদ্দিন দিদার বলেন, কোরববারি জন্য আমার খামারে ছোট-বড় ১৫শ গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে। অনেকে গরু পছন্দ করে বুকিং দিচ্ছে। গত মঙ্গলবারও ১২টি গরু বুকিং হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার খামারে স্ব-পরিবারে এসে গরু পছন্দ করে গরু করার সুযোগ রয়েছে। এখন গরু ক্রয় করলেও ক্রেতা ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন গরু নিয়ে যেতে পারবে।
এছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানীর জন্য প্রায় ৫শ গরু প্রস্তুত রয়েছে নাহার ডেইরী ফার্মে। এবার প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক গরুর কোরাবানীর জন্য মোটাতাজা করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে গরু বেচাকেনা করছেন।
নাহার এগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, অমরা নিজস্ব ফার্মে জন্ম নেয়া হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুগুলোকে নিয়মমাফিক নেফিয়ার ঘাস ছাড়াও পুষ্টিকর কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ক্যাটেল ফিড খাওয়ানো হয়। আমাদের গরুগুলোকে প্রাণঘাতী স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ খাওয়ানো হয় না। গরুগুলো হয় রোগমুক্ত, স্বাস্থ্যবান ও প্রাণবন্ত। মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের নলখো, ঘেড়ামারায় ও চট্টগ্রামের বায়েজীদ লিংক রোডস্থ আরেফিন নগর( সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এর নিকটে) অবস্থিত নাহার ডেইরী ফার্মে গরু রয়েছে । এবার কোরবানির জন্য ৫শ গরু প্রস্তুত করা হয়েছে।
ওয়াহেদপুর এলাকার প্রান্তিক খামারি আবুল কাশেম বলেন, এবার কোবানির জন্য আমি ১২ টি গরু মোটাতাজ করেছি। তবে গত কয়েক মাস থেকে কয়েক দফা গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সে অনুযায়ী কোরবানির সময় পশুর উপযুক্ত দাম নিয়ে শংকায় রয়েছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাহমিনা আরজু বলেন, মিরসরাই উপজেলায় ৫৭ হাজার ৬৮০টি পশু মজুত রয়েছে। এসব কোরবানির পশু উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন হাটে বিক্রি হবে। তবে ভারত বা অন্য জেলা থেকে গরু না আসলে খামারিরা লাভবান হবেন।