রাজু কুমার দে
মিরসরাইয়ে তথ্য গোপন করে সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জসহ ঋণ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে আমার বাড়ি আমার খামার (পূর্বের নাম একটি বাড়ি, একটি খামার) প্রকল্পের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে বোর্ডের আদেশ না মেনে সার্ভিস চার্জসহ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ঋণ আদায় করায় অনেকে পুনরায় ঋণ নিয়ে পূর্বের ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন। তথ্য গোপন করায় ইতিমধ্যে ৩টি সমিতির সদস্যরা মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। একই সাথে সমিতির দরিদ্র সদস্যদের কাছ থেকে আদায় করা সার্ভিস চার্জ ফেরত দেওয়ারও দাবি করেছেন তারা। এছাড়া সার্ভিস চার্জ মওকুফের সুবিধার কথা সমিতির সদস্যদের না জানানোর কারণে অনেকেই এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে ঋণের আসল টাকাও ব্যাংকের কোষাগারে জমা দিতে পারেনি সমিতির সদস্যরা।
জানা গেছে, মিরসরাইয়ে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে ৩’শটির বেশি সমিতি রয়েছে। প্রতিটি সমিতিতে সর্বোচ্চ ৬০ জন সদস্য রয়েছে। সমিতির অসচ্ছল সদস্যদেরকে প্রকল্পের আওতায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়। ঋণ নিয়ে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সারাদেশে প্রকল্পের বিপুল পরিমান ঋণের টাকা খেলাপি হয়ে পড়ে। তাই ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদানকৃত ঋণের সার্ভিস চার্জ মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের সভায়।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকবর হোসেন স্বাক্ষরিত স্মারক নং- পসব্য/প্রকা/পরি-৩২/২০২০-২০২১/৪০৬৬ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ ২০২১ বোর্ডের ৬০তম সভায় যে সব ঋন গ্রহীতা মৃত্যবরন করেছে এবং উত্তরাধীকারীগন আর্থিক অনটনের কারণে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না, যাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এবং যারা আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ঋন পরিশোধ করতে পারছে না তাদের ঋণের আসল টাকা ৩০ জুন ২০২১ এরমধ্যে পরিশোধ সাপেক্ষে সার্ভিস চার্জ মওকুফের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত গোপন রেখে মিরসরাইয়ে সমিতির সদস্যদের মামলার ভয় দেখিয়ে গত জুন মাসের মধ্যে সদস্যদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জসহ ঋণ আদায় করেছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মিরসরাই শাখা। সার্ভিস চার্জ মওকুফের সুযোগ না দেওয়ায় অনেক সদস্য পুনরায় ঋণ নিয়ে পূর্বের ঋনের টাকা পরিশোধ করেছে বলে দাবি করেছে।
বর্তমানে কি পরিমাণ ঋণ খেলাপি রয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক মিরসরাই শাখার ব্যবস্থাপক পিপলু দে জানান, ২০১৪ সাল পর্যন্ত আলাদা করে কোন হিসাব তাদের শাখায় নেই। কারন এধরণের হিসাব কখনও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে চায়নি। এছাড়া সার্ভিস চার্জসহ ঋণ আদায় করা হয়নি দাবি করেন তিনি বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে কয়েকজন অভিযোগ দিয়েছেন।
আবুনগর একটি বাড়ি একটি খামার সমিতির পক্ষে অভিযোগকারী সৈয়দ মোঃ মামুন জানান, একটি বাড়ি একটি খামার সমিতি প্রকল্পের সদস্যদের অধিকাংশ আর্থিক ভাবে অস্বচ্ছল। ফলে ঋণ নিয়েও অনেকে দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করতে পারছিলেন না। গত ১৪ মার্চ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে পূর্বে ঋন গ্রহীতাদের সার্ভিস চার্জ মওকুফ করে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়। কিন্তু এ সুযোগ মিরসরাইয়ে সমিতির সদস্যদের না দিয়ে চলতি বছরের ৩ মে’র মধ্যে সার্ভিস চার্জসহ ঋণের টাকা প্রদানের নোটিশ দেয়া হয়। সদস্যদের কাছ থেকে ঋন আদায়ের পর তাদের পাস বই ও টাকা জমার রসিদ কিছুই দেওয়া হয়নি।
কাজল দেবনাথ নামে এক সদস্য জানান, তাদের বাড়ির ৫ জন সদস্য আলাদা ভাবে প্রত্যেকে ১৫ হাজার টাকা করে ২০১৩ সালে ঋণ নেন। দুইজনের ঋন আগেই পরিশোধ করা হয়েছে। অন্য তিনজনের ৪৫ হাজার টাকা ঋণের সার্ভিস চার্জসহ ৭২ হাজার ৩শ টাকা পরিশোধ করতে আবার সমিতি থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। এরপর ১২ হাজার ৩’শ টাকা অন্যেও কাছ থেকে ধার নিয়ে পরিশোধ করেছেন। রেহানা আক্তার নামে এক সদস্যদের পাস বইয়ে দেখা যায়, তিনি গত ২৭ জুন ১০ হাজার টাকা ঋণের সার্ভিস চার্জসহ ১৫ হাজার ৯৩৩ টাাকা পরিশোধ করেছেন। মঠবাড়িয়া সমিতির সভাপতি মোঃ আজিজুর রহমান জানান, ঋণের সার্ভিস চার্জ মওকুফের সুবিধার কথা অফিস থেকে তাদের জানানোই হয়নি। ফলে ব্যাংকের কোষাগারে ঋনের আসল টাকা জমা করতে পারেনি সমিতির সদস্যরা।
এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিরনহাজুর রহমান জানান, আমার বাড়ি আমর খামার সমিতির তিনজন সদস্যদের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয় গুলো নিয়ে তদন্ত চলছে।