আজ মিরসরাইয়ের ১৬ ইউনিয়নে ভোট

মোহাম্মদ ইউসুফ :

মিরসরাই উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়ন পরিষদে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলার ২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। নৌকার প্রার্থীরা বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী হয়ে ফুরফুরে থাকলেও সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। এদিকে সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী থাকায় ভোটের সময় সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখানকার ১৩ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং ৬ জন সংরক্ষিত ও ১৩ জন সাধারণ সদস্য ইতোমধ্যে একক প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে গেছেন। বাকী ৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে এবং সবগুলো ইউনিয়নে সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে আজ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নগুলোতে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৮৯ জন সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। অস্থায়ী ৯টি কেন্দ্র সহ মোট ১৪৮টি কেন্দ্র। মোট ভোটার ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬০ হাজার ৪২৬ জন এবং মহিলা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩১০ জন। ১৬টি ইউনিয়নে কোন কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। ৯নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নে ইভিএমে ও বাকী ১৫টি ইউনিয়নে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে ১৪৮ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৯’শ জন সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ১ হাজার ৮’শ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৩ প্লাটুন বিজিবি, প্রতিকেন্দ্রে ৫-৭ জন পুলিশ, ১৮-২০ জন আনসার সদস্য নির্বাচনী কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

নির্বাচনে উপজেলার ৯নং মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী মো. সাইফুল্লাহ (ঘোড়া প্রতীক), খায়রুল বাশার ফারুক (আনারস প্রতীক) আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. শামছুল আলম (নৌকা প্রতীক) কে সমর্থন দিয়ে সরে গেছেন। অন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আজম খানকে (চশমা প্রতীক) প্রচার প্রচারণায় দেখা যায়নি। ১২নং খইয়াছড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহফুজুল হক জুনু (নৌকা প্রতীক) বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জাহেদ ইকবাল চৌধুরী (ঘোড়া প্রতীক), জাতীয় পার্টি মনোনীত নুর নবী (লাঙ্গল প্রতীক) প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ৬নং ইছাখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. নুরুল মোস্তফা (নৌকা প্রতীক) ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা ভূঁইয়া (আনারস) প্রতীকে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।

প্রচারণার শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদ প্রার্থীরা ক্লান্তিহীন প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নিজেদের শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।

উপজেলার ১২ নম্বর খৈয়াছরা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, আমার এলাকার নৌকা পদপ্রার্থী বহিরাগত ভাড়াটে লোকজন আনার প্ল্যান করছে। তারা কেন্দ্রে ভোটারদের বাধা দিতে পারে। নির্বাচনে কেউ যাতে এজেন্ট না হয় সেজন্য প্রতিনিয়ত আমার কর্মীদের প্রাণনাশের হুমকী দিচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ আমার এজেন্ট থাকতে রাজী নয়। এ বিষয়ে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।

উপজেলার ১২ নম্বর খইয়াছড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহফুজুল হক জুনু জানান,‘ গ্রাম হবে শহর’ এ শ্লোগানে আমার নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছি। ভোটাররা উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। সুষ্ঠ ভোট নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগকে তিনি মনগড়া কথাবার্তা বলে দাবী করেন।

উপজেলার ৬নং ইছাখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, প্রচারণা শুরুর পর থেকে নৌকার প্রার্থীর লোকজন পোস্টার, ব্যানার লাগাতে দিচ্ছেনা আমার কর্মীদের। লাগালেও ছিঁড়ে ফেলছে। নির্বাচনের দিন কেন্দ্র দখলের পাশাপাশি বহিরাগত ভোটার আনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে নৌকার প্রার্থী। আমি রির্টানিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত তিনিও।

৯ নম্বর সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামছুল আলম দিদার জানান, প্রচারণার সময় আমি ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডের প্রত্যেক বাড়ীতে গণসংযোগ করেছি। প্রত্যেক ওয়ার্ডে নৌকা মার্কার জোয়ার উঠেছে। বৃহস্পতিবার ভোটের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নৌকাকে তারা বিজয়ী করবে বলে আমি মনে করি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফারুক হোছাইন জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের লক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। মিরসরাই সদর ইউনিয়নে ইভিএম ও বাকী ১৫ টি ইউনিয়নে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

সহকারি পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) লাবিব আবদুল্লাহ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। কেন্দ্রের পাশাপাশি টহলেও পুলিশ থাকবে। কোন কেন্দ্রে যদি বহিরাগত কাউকে পাওয়া যায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

আরো খবর