নিজস্ব প্রতিবেদক :
মিরসরাইয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুুল হকের পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে নুরুল করিম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে মিরসরাই প্রেস ক্লাবে ফজলুল হক একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফজলুুল হকের পক্ষে তার ছেলে মাজহারুল আনোয়ার মামুন লিখিত বক্তব্যে জানান, মিরসরাই পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের তারাকাটিয়া গ্রামে আমার পিতার ক্রয়কৃত জমিতে গত ১৩ জুলাই বাড়ীর সীমানায় টিনের ঘেরা দেওয়ার সময় নুরুল করিম বাঁধা দেয়।
এসময় সে আমাদের বাড়িতে জায়গা পাবে বলে দাবী করেন। রাঘবপুর মৌজার আরএস ৭৪৪ দাগে ৬শতক জায়গা খরিদসূত্রে মালিক আমার বাবা ফজলুল হক। বিগত ২০০৫ সালে ও গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর জায়গার পরিমাপে আমাদের বাড়ীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়। নুরুল করিম নিজেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হকের ছেলে দাবী করেন, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হকের একমাত্র সন্তান নুরুল আলম ১৯৯৪ সালে পাকিস্তান যাওয়ার পর তার আর হদিস নেই। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিবুল হক শহীদ হন। তাঁর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী হার খাতুন উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পশ্চিম মিঠানালা ছেরু কামলা বাড়ীর মোজাম্মেল হোসেনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর হার খাতুন তার বাবার বাড়ীর পাশে মিরসরাই পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের তারাকাটিয়া গ্রামে জায়গা কিনে নতুন বাড়ী করেন। হার খাতুনের দ্বিতীয় সংসারে রাশেদা বেগম (৪১) ও নুরুল করিম (৩৮) জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু রাশেদা বেগম ও নুরুল করিম নিজেদেরকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবী করেন এবং সরকার কর্তৃক সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছেন।
তিনি আরো বলেন, নুরুল করিম আমাদেরকে হয়রানী করার জন্য গত ১৩ জুলাই দুপুরে একটি নামসর্বস্ব ফেসবুকভিত্তিক একটি চ্যানেল নিয়ে যায়। ওই চ্যানেলের সাথে নিয়োজিত সাংবাদিক পরিচয়দানকারী অলি উল্যাহ নিজামী, ক্যামেরাম্যান নুরুচ্ছাপাসহ ৫-৬ জন ব্যক্তি আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকী দেন। পরবর্তীতে তারা ১৪ জুলাই ওই চ্যানেলে ‘মিরসরাইয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ পরিবেশন করেন। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আমি এমন সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাই ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় দিয়ে সরকারী ভাতা নেওয়ার বিষয়ে নুরুল করিমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছি।
এবিষয়ে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম চৌধুরী বলেন, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হকের একমাত্র সন্তান নুরুল আলম পাকিস্তান যাওয়ার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ নেই। মুজিবুল হক মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে যাওয়ার পর তার স্ত্রী হার খাতুন মোজাম্মেল হোসেনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেখানে রাশেদা বেগম ও নুরুল করিম নামে দুই সন্তান রয়েছে। তারা নিজেদেরকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হকের সন্তান দাবী করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন, যা আইনত অপরাধ।
মিরসরাই পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছ হোসেন লিটন জানান, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফজলুুল হকের বাড়ীর সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় উত্তেজনা দেখা দিলে আমি কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিই। শীঘ্রই এ বিষয়ে উভয় পক্ষকে ডেকে বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। নুরুল করিম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কিনা এই বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে দাবী করেন।