মিরসরাইয়ে শহিদুল ইসলাম আকাশ (২৮) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে জবাই করে হত্যার ঘটনা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এলাকায়। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চিনকির হাটে নিজের মালিকানাধীন দোকান থেকে টেনে বাইরে এনে প্রকাশ্য কুপিয়ে এবং পরে জবাই করে তাকে হত্যা করা হয়। সে উপজেলার ২ নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী। হামলার পর রাত ৯ টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আকাশ। সে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর গ্রামের মানত মিঝি বাড়ির নুরুল ইসলামের একমাত্র পুত্র। পুলিশের দাবি, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মামুন বাহিনীর প্রধান মামুন আকাশকে কুপিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিহত শহিদুল ইসলাম আকাশের বাবা নুরুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তাঁর ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসী মামুনের নেতৃত্বে ইকবাল, মোতালেব সহ কয়েকজন মিলে আমার ছেলেকে খুন করেছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, ‘আমার ছেলের কারণে এলাকায় অনেকে চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসা করতে পারছে না। এ জন্য অর্থ দিয়ে এসব ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমার আকাশকে নির্মমভাবে খুন করেছে।’
এদিকে মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ৪টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি ও হামলার সাথে জড়িত কাউকেও গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে জানান জোরারগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খায়রুল আলম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে শহিদুল ইসলাম আকাশের লাশের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাপন করা হবে বলে পরিবারসূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সোমবার সন্ধ্যা ৬ টার সময় বারইয়ারহাট-করেরহাট সড়কের চিনকিরহাট বাজারে যুবলীগ কর্মী শহিদুল ইসলাম আকাশের মালিকানাধীন নাজমা টিম্বার এন্ড ফার্ণিচার মাটে বসে ব্যবসায়িক কাজ করছিলেন। এসময় স্থানীয় ইসলামপুর গ্রামের সন্ত্রাসী হুমায়ুন কবির মামুনের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১০-১৫ জন হামলা চালায় আকাশের উপর। হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় আকাশকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার অবস্থার অবণতি ঘটলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় আকাশ।
হিঙ্গুলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি কামরুল ইসলাম জানান, শহিদুল ইসলাম আকাশ রাজনৈতিক কোন পদ পদবীতে না থাকলে ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি হিঙ্গুলী ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ছিলেন।
হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সন্ধ্যা ৬ টায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আধিপত্য নিয়ে হামলা করে শহিদুল ইসলাম আকাশের ওপর। ২০১৮ সালেও তাঁর ওপর হামলা হয়েছিল। এবার তাঁকে (আকাশ) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে।
হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া জানান, আমি খুনের ঘটনা সম্পর্কে সঠিক এখনো জানি না। আমার এলাকায় সন্ত্রাসী নেই। বারইয়ারহাটকেন্দ্রিক কিছু ছেলে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কে জড়িত পুলিশ তদন্ত করে বের করবে।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নূর হোসেন মামুন বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়ের করেনি। কাউকে আটকও করা যায়নি। তবে এ ঘটনার সাথে জড়িত এমন কয়েকজনের পরিচয় চিহ্নিত করা গেছে। বাকিটা পরে জানানো হবে। আকাশের বাবার বক্তব্যে হত্যাকান্ডের সাথে কয়েকজন জড়িত থাকার বিষয়ে ওসি বলেন, মামুনের বিরুদ্ধে থানায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী-নির্যাতনসহ ১০টি মামলা রয়েছে।