মিরসরাইয়ে পরিবেশ দূষণ স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও প্রতিকার – প্রেক্ষিত শিল্পায়ন

top Banner

মোহাম্মদ আলমগীর

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম জেলার প্রবেশদ্বার নামে খ্যাত উপজেলা মিরসরাই। একদিকে ভারত, অন্যদিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য এলাকার ছোঁয়া আছে বলে এখানে রয়েছে নানাবিধ বৈচিত্র্য। পুরো উপজেলার মধ্যভাগ দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম ট্রাংক রোড় এবং রেলপথ পাহাড়ি উপকূলীয় এলাকাকে দি-খন্ডে বিভক্ত করেছে। নানাভাবে সমৃদ্ধ এই উপজেলায় রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অফুরন্ত সম্ভাবনা। ৪৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলার পূর্ব পাশে রয়েছে পাহাড়ি জনপদ, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। এতদঞ্চলে শিল্পায়নের যাত্রা শুরু হয় একবিংশ শতাব্দীর দিকে। সেই থেকে শিল্পায়নের যাত্রা দিনদিন বেড়েই চলছে। শিল্পায়ন যেমন আর্শীবাদ তেমনিভাবে অভিশাপও।

পরিকল্পিত শিল্পায়ন গড়ে না ওঠার ফলে আশঙ্কাজনক হারে কমছে ফসলি জমি, বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। ছোট-বড় ছড়া ও খালগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভরাট হয়ে যাচ্ছে, ফলে আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে বন্যা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবেশ অদিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে এবং বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষণের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দুই ও তিন ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। যে হারে ফসলি জমি কমছে তাতে করে আগামী একদশকান্তে চরম খাদ্য সংকট দেখা দেবে।

পরিবেশ দূষণে শিল্পায়ন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যত্রতত্র অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। সৃষ্টি হচ্ছে নানা রকম রোগ-বালাইয়ের। ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন। পরিবেশের সবচেয়ে ক্ষতি ও বিপর্যয় ঘটেছে ঢাকাসহ শহরগুলোতে; সেখানকার মানুষ বিশেষ করে শিশুরা অপরিমেয় ক্ষতির শিকার। বায়ু, পানি, মাটি ইত্যাদিতে দূষণের মাত্রা অত্যধিক। একারণে বছরে আর্থিক যে-ক্ষতি সাধিত হচ্ছে তার পরিমাণ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির (২) দশমিক শতাংশ। যত্রতত্র অপরিকল্পিত শিল্পায়নের ফলে শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম শহরগুলো নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যান্য জেলা উপজেলাগুলোও। পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব, শিল্প খাতের এ নেতিবাচক প্রভাব কমাতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প-কলকারখানার পানি ব্যবহার হ্রাস করে বর্জ্য নিষ্কাশন কমানো, প্রতিটি শিল্প-কলকারখানার ইটিপি স্থাপন নিশ্চিতকরণ। সর্বপরি গ্রীন ফ্যাক্টোরী স্থাপনে সরকারের সুদৃষ্টি, উদ্যোক্তা এবং রাজনৈতিকদের সৎ ও সদিচ্ছা প্রয়োজন।

জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের জন্য পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। শিল্পায়ন ইটভাটা হতে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের ফলে পরিবেশ দূষিত হয়। অপরিকল্পিত এবং যথেচ্ছা জীবনযাপন, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, যানবাহন ও শিল্পাঞ্চল ইত্যাদির ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য অধিক বাসস্থান ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে হচ্ছে। গাছপালা ও বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে। এসব শিল্পকারখানার বর্জ্য নিরসনের জন্য সঠিক পয়োঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। শিল্পকারখানার বর্জ্যে বিভিন্ন বায়ুবাহিত রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া সড়কের কাজের বিলম্ব হওয়াও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ।
মিরসরাইয়ে ছোট বড় অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান বায়ুদূষণের সাথে জড়িত। বায়ুদূষণের প্রধান উৎস ইট ভাটা, যানবাহন, শিলল্পকারখানা, আবদ্ব (Indoor) বায়ু দূষণ। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সাল হতে CASE প্রকল্পের আওতায়Air Quality Index

(PM10, PM2.5 NO2,CO, SO2, O3) মনিটরিং করছে এবং বায়ু দূষণরোধ কল্পে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বসংস্থার একটা হিসাবে দেখা যায়, বিশ্বের প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৯ জন বেশি মাত্রায় দূষিত বায়ু শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যাবহার করে। সংস্থাটি আরো জানায়, বায়ুদূষণ এমন একটি মারাত্মক প্রভাবক যার জন্য ২৪ শতাংশ পূর্ণ বয়স্ক মানুষের হার্টের অসুখ, ২৫ শতাংশ স্ট্রোক, ৪৩.২ শতাংশ পালমোনারী রোগ এবং ২৯ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার হয়ে থাকে দূষণের কারণে। মিরসরাই সহ চট্টগ্রামে বাতাসে ক্ষুদ্র বস্তু কণা- ১০ (PM10) এর পরিমাণ বছরের শুরুতে প্রথম ৩ মাস জানুয়ারী, ফেব্রæয়ারী, মার্চ এবং বছরের শেষ ২ মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ এর আদর্শমান ১৫০ ug/m3 অপেক্ষা বেশি। সেজন্য বায়ু দূষণরোধে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে।

ইতিমধ্যে মিরসরাইয়ে হচ্ছে এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। এই শিল্পনগরে ছোট বড় হাজার হাজার শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। সরকারের তথ্যমতে, কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫ লাখ মানুষের। কিন্তু প্রশ্ন হলো: শিল্পকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে কি? যদি ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের মতো বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য নদী কিংবা সমুদ্রে ফেলা হয় তাহলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। কারণ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে হাজার হাজার শিল্পকারখানা হবে। যা সমগ্র বাংলাদেশে রয়েছে কিনা জানা নেই। এত বেশি শিল্পকারখানা ও ৫ লাখ চাকুরিজীবীর বর্জ্য মিলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করবে। শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কারখানা স্থাপনের জায়গা ভরাটের জন্য পাহাড় কাটার হিড়িক পড়ে গেছে। শুধু নয়, পরিবেশ দূর্ষণের পাশাপাশি কমে যাবে কৃষিজমি। যদিও সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে কৃষিজমিতে শিল্পকারখানা গড়তে দেওয়া হবে না। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মজীবীদের বাসস্থানের জন্য যে-আবাসিক গড়া হবে এ-বিষয়ে সরকারের এক্ষুনি পরিকল্পনা প্রয়োজন। যদি স্থানীয়রা কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে তোলে তাহলে কৃষিজমি কমে যাবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে কয়েকটি সিন্ডিকেট মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আশপাশের কৃষি জমি কেনা শুরু করেছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে মিরসরাইয়ে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাবে। এছাড়াও মিরসরাইতে স্থাপিত হচ্ছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন। এর নেতিবাচক প্রভাব ইতিমধ্যে কারখানার পাশ^বর্তী ৪টি ইউনিয়নে পড়তে শুরু করেছে। ইউনিয়নগুলোর পানির স্তর নিচে নেমে গেছে; শুষ্ক মৌসুমে অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যায়না। এতে সুপেয় পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে, বাড়ছে অগভীর নলক‚পসমূহে আর্সেনিকের মাত্রা। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানাবিধ পানিবাহিত রোগে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ নিয়েও সরকারকে চিন্তা করতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মিরসরাই অঞ্চলকে আবাসিক জোন, বাণিজ্যিক জোন এবং অর্থনৈতিক জোন হিসাবে ভাগ করে সুপরিকল্পিতভাবে বিবেচনায় আনার এখনই সময়।

দেশের ইস্পাত খাতের জায়েন্ট কোম্পানিগুলো স্থাপিত হয়েছে সোনাপাহাড় এলাকায়। সোনাপাহাড় এলাকায় বছর কয়েক আগে স্থাপন করা হয়েছে দেশের বৃহৎ বিলেট কাস্টিং প্লান্ট। এই প্লান্টে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস না থাকায় বিলেট উৎপাদনে মাটির নিচ থেকে হাইড্রোলিক রিগ বোরিংয়ের মাধ্যমে গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করছে। আর তাতে আশেপাশের এলাকায় তীব্র পানিসংকট হচ্ছে। কিন্তু ওই এলাকায় তাদের চাহিদা মেটানোর মতো কোনো প্রাকৃতিক পানির উৎস ও সরবরাহকারী কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে তারা মাটির হাজার ফুট গভীর থেকে বড় বড় পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করছে।

জানা যায়, এক টন রড উৎপাদনে এক হাজার ২০০ লিটার পানি লাগে। সে হিসেবে একটি বড় কারখানায় বছরে প্রায় ছয় কোটি ৩৬ লাখ তিন হাজার ঘনমিটার পানি লাগার কথা। কিন্তু আমরা সঠিক বলতে পারছি না তারা প্রতিদিন কী পরিমাণ পানি উত্তোলন করছে। তবে এই কারখানা স্থাপনের পর থেকে এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কারখানার পার্শ^বর্তী ৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় ইহার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ওইসব পানির স্তর নিচে নেমে গেছে শুষ্ক মৌসুমে অগভীর নলকূপে পানি পাওয়া যায় না। এতেও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে পানির সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে ফেনী নদী ও মহামায়া লেক থেকে পানি সংগ্রহ করা যেতে পারে। কারণ মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই সাত মাসে ১০১ দশমিক ২২ কোটি ঘনমিটার পানি ফেনী নদীতে উদ্বৃত্ত থাকে আর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই ছয় মাস মহামায়া লেকে শূন্য দশমিক ৭১ কোটি ঘনমিটার পানি উদ্বৃত্ত থাকে। কিন্তু বিএসআরএম ব্যয়বহুল হাইড্রোলিক রিগ বোরিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের উদ্যোগে পানি উত্তোলন করছে। এতে আশেপাশের এলাকায় পানিসংকট দেখা দেওয়া স্বাভাবিক। কারণ সীতাকুন্ড ও মিরসরাই এলাকায় ২৮০ থেকে ৩০০ ফিট নিচে হেভি রক/সোল সমস্যা থাকায় উপরের পানি নিচে নামে না। ফলে স্বল্প গভীরের নলক‚পে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বাড়লেও গভীর নলক‚পে পানির প্রভাব বাড়ে না। এতে পাশের এলাকায় পানি সংকটসহ ভূমিধস হতে পারে।

ইতিমধ্যে ইছাখালীর বিরান চরাঞ্চলে এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী’ গড়ে তোলা হচ্ছে। ৩০ হাজার একর জমির উপর নির্মাণাধীন ৩০ টি জোনে দেশের খ্যাতনামা কোম্পানীগুলোর ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পকারখানা, সেখানে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৫ লাখ মানুষের। প্রশ্ন হলো শিল্পকারখানা থেকে নিগত বর্জ্য-নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যদি ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের শিল্পকারখানার মতো বঙ্গোপসাগরে ফেলা হয় তাহলে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মিরসরাই অঞ্চলকে আবাসিক জোন, বাণিজ্যিক জোন এবং অর্থনৈতিক জোন হিসাবে ভাগ করে সুপরিকল্পিতভাবে বিবেচনায় না আনলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।

কারণ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে হাজার হাজার শিল্পকারখানা হবে। যা সমগ্র বাংলাদেশে রয়েছে কিনা জানা নেই। এত বেশি শিল্পকারখানা ও ১০ লাখ চাকুরিজীবীদের বর্জ্য মিলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করবে। শিল্পাঞ্চালে বিভিন্ন কারখানা স্থাপনের জায়গা ভরাটের জন্য পাহাড়-কাটার হিড়িক পড়ে গেছে। শুধু নয়, পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি কমে যাবে কৃষিজমি। যদিও সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে কৃষি জমিতে শিল্পকারখানা গড়তে দেওয়া হবে না। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মজীবীদের বাসস্থানের জন্য যে আবাসিক গড়া হবে এ বিষয়ে সরকারের এক্ষুনি পরিকল্পনা প্রয়োজন। যদি স্থানীয়রা কৃষিজমি ভরাট করে গড়ে তোলে তাহলে কৃষি জমি কমে যাবে।

এছাড়াও মিরসরাইয়ের যত্রতত্র গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি ফার্ম। এই পোল্ট্রি ফার্মের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলায় দূর্গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানাবিধ অসুখে। পরিবেশ দূষণের ফলে নানাবিদ রোগ হতে পারে। এগুলোর মধ্যে হৃদরোগ, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্ট জনিত নানা রোগ, স্ট্রোক, চোখে ছানি পড়া শিশু ও গর্ভবতী নারীদের সমস্যা, উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি প্রজন্ম যদি দীর্ঘসময় বায়ুদূষণের মধ্যে কাটিয়ে দেয়, তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নই যেহেতু পরিবেশ বিনাশের প্রধান কারণ, সুতরাং এই দুটি ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে পরিকল্পনাহীনভাবে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন হতে না পারে। নগর স¤প্রসারণ ও শিল্প-স্থাপনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেমন থাকতে হবে তেমনি এ-ব্যাপারে কাম্য পরিবেশের শর্তসমূহ যাতে লঙ্ঘিত না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম হতে হবে পরিবেশসম্মত। তা না হলে টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে না। পরিবেশ ধ্বংস করে কখনোই টেকসই উন্নয়নও প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না। পরিবেশকে অমান্য করে, উপেক্ষা করে, গুরুত্ব না দিয়ে যা কিছুই করা হোক না কেন, তার ফল শুভ হতে পারে না। মিরসরাইয়ে যতগুলো শিল্পকারখানা রয়েছে সব কয়টির পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গড়ে উঠা হাজার হাজার শিল্পকারখানার বর্জ্য যাতে স্থানীয় নদী কিংবা সমুদ্রে ফেলা না হয় সে দিকে সরকার এবং শিল্প-উদ্যোক্তাদেরকে নজর দিতে হবে।

যদিও মিরসরাইর অর্থনীতির মেরুডদন্ড শক্তিশালী করতে শিল্পায়ন অপরিহার্য। এসময়ের কৃষি অর্থনীতি থেকে মিরসরাই ক্রমেই শিল্পায়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যদিও বর্তমানে জিডিপিতে কৃষির চেয়ে শিল্পের অবদান অধিক। তবে শিল্প বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়টি শঙ্কাগ্রস্ত করে তুলছে ওয়াকিবহাল মহলকে।

সম্ভাবনাময় শিল্পকে পরিবেশ-বান্ধব করতে হলে একনজরে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, তা না হলে ভবিষ্যতে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়বে আমার আপনার প্রিয় মিরসরাই।
১. ফেনী নদী ও মহামায়া লেক থেকে ইস্পাত শিল্পের জন্য পানি সংগ্রহ।
২. ছড়া, ছোট বড় খালগুলোকে সচল রাখা।
৩. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মিরসরাইকে আবাসিক জোন, অর্থনৈতিক জোন, বানিজ্যিক জোন এবং শিল্প জোনে ভাগ করে সু-পরিকল্পিত কৌশল প্রণয়নের এখনই সময়।
৪. উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আবর্জনা প্রক্রিয়াকরণ প্ল্যান্ট বসানো এবং তা দিয়ে সার তৈরি করা।
৫. পাহাড় কাটা, বালি উত্তোলন, ছোট বড় ছড়া ও খাল ভরাটের ক্ষেত্রে পরিবেশের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক।
৬. চরাঞ্চলে মহিষ, ভেড়াসহ অন্যান্য প্রাণীর চারণভূমি নিশ্চিত করা অতীব জরুরী।
৭. রাস্তার পাশে ও জনবসতি-সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থান সবুজায়ন।
৮. উচ্চ সালফার-যুক্ত কয়লা আমদানী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
৯. বিদ্যমান FCK গুলোকে improved Zigzag kiln / অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তর।
১০. Continuous Air Monitoring Station ( CAMS) স্থাপন করা।
১১. Auto Fuel Policy প্রণয়ন।
১২. Open Burning রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ।

আরো খবর