মিরসরাইয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ
# মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ # আনাবাদি জমিতেও চাষ হয়েছে # সরিষা চাষে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের কৃষকরা সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সারাদেশের মতো এ উপজেলায়ও লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ সরিষা চাষ হয়েছে। সরিষা চাষে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ। এ কারণে উপজেলায় এবার সরিষা চাষ বেড়েছে। ভোজ্যতেলের চাহিদা মেটাতে সরিষা চাষে জোর দিয়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ২০২২ সালে ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ হেক্টরে। চলতি মৌসুমে আবাদ হয়েছে ৬২৫ হেক্টর জমিতে। সরিষা চাষিদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
একসময় এ অঞ্চলে সরিষা চোখেই পড়তো না। এখন দিনে দিনে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠ। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছেন কৃষক।
কৃষকেরা অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশি) বারি-১৪, বারি-৯, বিনা ৯-১০, সরিষা-১৫, সোনালি সরিষা (এসএস-৭৫) ও স্থানীয় টরি-৭ আবাদ করেছেন। বিশেষ করে উপজেলার জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলী, ওসমানপুর, খৈয়াছড়া হাইতকান্দি, ইছাখালী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগায় কৃষকেরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেন। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত বেশি ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি।
উপজেলার হিঙ্গুলী গ্রামের সরিষা চাষি রশিদুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ১০ কড়া জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। মাত্র হাজার খানেক টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন ১০ গুণ লাভ হবে।
দক্ষিণ মধ্যম অলিনগরের চাষি গনি আহম্মদ বলেন, ‘গত বছর ২০ শতক জমিতে বারি-১৪ সরিষা চাষ করেছি। ফলন হয়েছে ৩০ কেজি। এবার একই জাতের সরিষা ৩০ শতক জমিতে চাষ করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন হবে আশাবাদী।’
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘এবার উপজেলায় প্রায় ৩২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছর আবাদ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে। সরিষা চাষের জন্য প্রায় ৩০০ জন কৃষককে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ বিতরণ করা হয়েছে। সরিষা চাষের জন্য উপযোগী মাটি হচ্ছে দোঁআশ মাটি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘উপজেলায় চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কৃষকদের বীজ, সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করেছে। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি বারি-১৪ সরিষা চাষ হয়েছে।’