বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ৯ শ একর জায়গায় ভারতের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরী করছে সরকার। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজার আওতায় উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) জিটুজি ভিত্তিতে তৈরি হচ্ছে।
এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়নের জন্য টেন্ডার সম্পন্ন হবে। আর আগামী বছরের শুরুতে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেজা। খবর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের।
চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে বেজা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর গড়ে তুলছে। সেখানে ৯০০ একর জায়গা দেওয়া হয়েছে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল (মিরসরাই) তৈরী করার জন্য। জাপান আর চীনের জন্যও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করেছে।
বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে ২০১৫ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ভারত সরকারের নমনীয় ঋণ বা কনসেশনাল লাইন অফ ক্রেডিটের আওতায় এ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হবে।
মিরসরাইয়ে ভারতীয় ইজেড নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক মোঃ মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘এখন ভূমি উন্নয়নের জন্য টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরীর কাজ চলছে। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে টেন্ডার সম্পন্ন হবে। আমরা আশা করছি আগামী বছরের শুরুতে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘জায়গাটি এখন নিচু আছে, সেটা মাটি দিয়ে ভরাট করতে হবে। কাজ শুরু হলে কারখানা তৈরী করার মতো জায়গা তৈরী করতে দেড় বছরের মতো সময় লাগবে। তবে এখানে কতটি শিল্প প্লট হবে, কর্মসংস্থান কেমন হবে সেটা এখনও নির্ধারণ করিনি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। ডিজাইন তৈরির কাজ চলছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের সাব-জোন ১৯ এ প্রায় ৯০০ একর ভূমির উপর ভারতীয় অর্থনেতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য ‘মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন’ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি পৃথক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা।
প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিবে ৫০.২৬ কোটি টাকা। বাকি ৯১৫ কোটি আসবে ভারতের লাইন অফ ক্রেডিট সুবিধার অধীনে নমনীয় ঋণ হিসেবে।
প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন, প্রবেশপথ নির্মাণ, প্রশাসনিক ভবন, নিরাপত্তা শেড, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা, টেলিযোগাযোগ, পানি শোধনাগারসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটির জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়; প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন।
প্রকল্পের আওতায় গত ১ এপ্রিল বেজা ও আদানি পোর্টস এবং এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে ডেভেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট বিষয়ক একটি চুক্তি ভারতের মুম্বাইয়ে স্বাক্ষরিত হয়।
আর গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর বেজা অফিসে প্রজেক্ট ম্যানেজার কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে ভারতের মাহিন্দ্রা কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
বেজা অফিসে মাহিন্দ্রা কনসালটিংয়ের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশে এখন ৩৫০টিরও বেশি ভারতীয় কোম্পানি নিবন্ধিত রয়েছে।
‘এই অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ আরও বাড়বে।’
বাংলাদেশে তারা অটোমোবাইল শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং লজিস্টিক সার্ভিসগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একই অনুষ্ঠানে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘মাহিন্দ্রা ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিংয়ের ভারতে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা সে অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের আলোকে একটি আন্তর্জাতিক মানের ভারতীয় ইজেড প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’