প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বহুল প্রতিক্ষিত ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন’ কলেজ

top Banner
  • এম মাঈন উদ্দিন

মিরসরাই-সীতাকুন্ড উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। মিরসরাই উপজেলার দক্ষিণ অঞ্চল ও সীতাকুন্ড উপজেলার উত্তর আঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ সময়ের প্রাণের দাবী ছিল একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে সেই স্বপ্ন অধরা থাকলেও ৫১ বছরে পূরণ হতে যাচ্ছে কাঙ্খিত সেই স্বপ্ন। মাধ্যমিকের গন্ডি ফেরিয়ে আর থেকে যাবে না ছাত্রের শিক্ষা জীবন। কিংবা দুরত্বের কারণে বন্ধ হবে ছাত্রীর শিক্ষা জীবন। এতদ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজ’। মিরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের কমরআলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ২ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মিরসরাই- সীতাকুন্ড দুটি উপজেলার বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে এই অঞ্চলের কলেজে পড়–য়া শিক্ষার্থীরা ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুন্ড কলেজ অথবা ১০ কিলোমিটার দূরে নিজামপুর কলেজ হলো উচ্চ শিক্ষার একমাত্র ভরসা।

নির্মাণাধীন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজের পাশ্ববর্তী কমরআলী উচ্চ বিদ্যালয়, মহালংকা উচ্চ বিদ্যালয়, হাইতকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়, সাহেরখালী উচ্চ বিদ্যালয়, ডোমখালী বদিউল আলম উচ্চ বিদ্যালয়, সাহেরখালী উচ্চ বিদ্যালয়, মহানগর উচ্চ বিদ্যালয়।
এসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলোতে পড়ালেখার মান প্রশংসনীয় হলেও একটি কলেজের প্রয়োজনীয়তা স্বাধীনতার ৫০ বছরেও পূরণ হয়নি। যুগযুগ এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দুর্দশা দেখে যাচ্ছে এলাকার অভিভাবক ও মাধ্যমিক এর শিক্ষকরা। সামর্থ্য থাকলেও সাহস করে এগিয়ে আসেনি কোন শিক্ষানুরাগী।
এই কলেজের আওতায় রয়েছে মিরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়ন, ওয়াহেদপুর ও সাহেরখালী ইউনিয়ন। সীতাকুন্ড উপজেলার সৈয়দপুর ও বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রামে রয়েছে যেখানকার গ্রামের ছেলে মেয়ে এখানে পড়াশোনা করতে পারবে।

ডোমখালী এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ নুরুল আমিন বলেন, একটি কলেজের জন্য আমরা পড়াশোনা করতে পারিনি। আমাদের সময় কলেজ ছিল অনেক দূরে, তখন রাস্তাঘাট কিংবা এতো বেশি যানবাহন ছিলোনা। তাই এসএসসি পাশের পর আর পড়াশোনার সুযোগ ছিলো না। আমার মতো অনেকে এসএসসির গন্ডি পেরিয়ে আর পড়াশোনা হয়নি। ইঞ্জিনিয়ার মোশারররফ হোসেন কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে বদলে যাবে এখানকার শিক্ষার চিত্র। আমরা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছে কৃতজ্ঞ।

সীতাকুন্ড উপজেলার মধ্যম বগাচতর এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীর বলেন, কখনো কল্পনাও করতে পারিনি কমরআলীতে কলেজ প্রতিষ্ঠা হবে। এসএসসি পাশের ছেলেরা দূরে গিয়ে কলেজে পড়াশোনা করতে পারলেও মেয়েদের পক্ষে অসম্ভব ছিলো। তাই এই কলেজ নারী শিক্ষায়ও অবদান রাখবে।

এদিকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হওয়ায় এখানকার মানুষের মাঝে আনন্দের জোয়ার বইছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর হলেও উচ্চ শিক্ষা গ্রাণের জন্য তারা একটি কলেজ পেতে যাচ্ছে। সকলে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর প্রশংসা করছেন।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলায় শিক্ষা বিস্তারে বৃটিশ আমল থেকেই অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছে মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পরিবার। তাঁর দাদা ছিলেন ফজলুর রহমান। তিনি ধুম ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ফজলুর রহমানের ৪ পুত্র ২ মেয়ের মধ্যে আলহাজ্ব ছৈয়দুর রহমান (এস রহমান) ছিলেন দ্বিতীয়।

তিনি সীতাকুন্ড, মিরসরাই, সন্দ্বীপ সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রচুর দান-অনুদান চালু করেন। মিরসরাইতে যখন কোন কলেজ ছিলোনা এস রহমান নিজামপুরে একটি কলেজ স্থাপনের জন্য তৎকালীন সময়ে এককালীন ১০ হাজার টাকা দান করেন।
১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মিরসরাই-সীতাকুন্ড থেকে সদস্য নির্বাচিত হন। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর সুযোগ্য পুত্র ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি মাত্র ২৭ বছর বয়সে ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রতিক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ২৫ মার্চ কালো রাতে স্বাধীনতাকামী জনতাকে নিয়ে শুভপুর ব্রিজে অগ্নিসংযোগ করে পাক সেনাদের চট্টগ্রাম অগ্রযাত্রা রুখে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজের অস্ত্র খালাস প্রতিরোধ করেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হন।

এই বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি জাতীয় এবং সংসদীয় আসনে সামগ্রিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। শিক্ষা বিস্তারে রাখেন সর্বোচ্চ অবদান। কিন্তু আজীবন মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়া মানুষটি ৫০টি বছরের সোনালী জীবনে নিজের নামে ছিটেফোঁটা কিছুই করেননি। তিনি মানুষের জন্য করে তৃপ্তি পান বলে কখনো নিজের নামে প্রতিষ্ঠান করার কথা ভাবতেও পারেননি। নাম প্রচার থেকেও তাঁর কাছে কর্ম হলো মহান।

সেই প্রচারবিমূখ গুনী মানুষ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ৭৯ বছর বয়সেও এখনো মনে প্রাণে তারুণ্য। সময় সুযোগ পেলে ছুটে বেড়ান রাজনীতির ও মানুষের কল্যাণে। তাঁর নাম স্বরণীয় করে ১৪নং হাইতকান্দি ইউনিয়ন বাসিকে শিক্ষার আলো জ্বেলে সম্মানিত করতে কমরআলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে তথা উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে ২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজ।

এস রহমান ট্রাস্টের অর্থায়নে কলেজটি নির্মিত হচ্ছে। ইতোপূর্বে এস রহমান ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত মহাজনহাট ফজলুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ, এস রহমান আইডিয়াল স্কুল সুনামের সাথে ও মানসম্মত ভাবে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ায় অবদান রেখে যাচ্ছে।

স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকার হিসেবে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছেন হাইতকান্দি ইউনিয়নের বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী।

সুশিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নে ভাসছে হাইতকান্দি বাসী। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কলেজ নামে এটি এস রহমান ট্রাস্টের অধিনে একমাত্র কলেজ। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুগযুগ জ্ঞানের আলো ছড়াবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে।

বহুল প্রতিক্ষিত এই কলেজ নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে আনন্দের সীমা নেই। মিরসরাই ও সীতাকুন্ড দুই এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য এটি দীর্ঘদিনের স্বপ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

আরো খবর