১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক পাননি মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের বদ্ধ ভবানি গ্রামে অবস্থিত ‘বদ্ধ গেরামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি। সম্প্রতি পুরো বিদ্যালয়ে পাঠদান দিচ্ছে মাত্র একজন শিক্ষক। এমন খবর প্রচার হলে দ্রুত ওই বিদ্যালয়ে দুই জন শিক্ষক দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক। এতে করে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১০৫ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান করাচ্ছে তিন জন শিক্ষক।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত করেরহাট ইউনিয়নের বদ্ধ গেরামারা এলাকার আশপাশের ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তাই সরকার ১৯৭৫ সালে বদ্ধ গেরামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। বিদ্যালয়টি স্থাপিত হওয়ার সময় ওই এলাকায় জনসাধারণ কম থাকলেও বর্তমানে প্রায় ৪০০-৫০০টি পরিবার রয়েছে। আর এসকল পরিবারের শিশুদের পড়াশোনার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘বদ্ধ গেরামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। কিন্তু বিদ্যালয়টি দূর্গম এলাকায় হওয়ায় শিক্ষকরা সহজে যেতে চান না ওখানে। ফলে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টি শিক্ষক সংকটে ভুগছে। মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে বদ্ধ গেরামারা প্রাথমিক বিদ্যালয় এমন খবর গণমাধ্যমে প্রচার হলে দ্রুত ওই বিদ্যালয়ে দুই জন শিক্ষক দেন শিক্ষা কর্মকর্তা। বর্তমানে শিক্ষক সংকট কিছুটা হলে লাঘব হয়েছে বলে জানান ওই বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ে প্রা-প্রাথমিকে ৬ জন, প্রথম শ্রেণীতে ১৩ জন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১৫ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ২১ জন, চর্তুথ শ্রেণীতে ১৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে ২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। মোট ১০৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে শিক্ষক রয়েছে মাত্র একজন। গত জানুয়ারিতে তিন শিক্ষক থাকলেও ওই মাসে একজন শিক্ষক প্রশিক্ষণে চলে যান। গত ৪ আগস্ট ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্রীপতি পাল অবসরে গেলে সহকারি শিক্ষক মোঃ আবু হাসানকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ইকবাল হোসেন ও পঞ্চম শ্রেণীর র্শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস তানজিনা বলেন, শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত পাঠদান হচ্ছিল না তাদের বিদ্যালয়ে। তবে বর্তমানে দুই জন শিক্ষক যোগদান করাতে পাঠদান নিয়মিত হচ্ছে বলে জানান তারা।
মোঃ মানিক নামে একজন অভিবাবক জানান, শিক্ষক সংকট থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিন দিন কমতে শুরু করেছিল। তবে বর্তমান শিক্ষা কর্মকর্তা দ্রুত দুইজন শিক্ষক দেয়াতে অভিবাবকদের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।
বদ্ধ খেরামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু হাসান জানান, গণমাধ্যমে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি জানার পর সম্প্রতি হিঙ্গুলী মানবিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একজন ও চুক্তি ভিক্তিক একজন শিক্ষক দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডাঃ নুরুজ্জমান পাটোয়ারী জানান, বিদ্যালয়টি পাহাড়ি এলাকায় হওয়ায় শিক্ষকরা সহজে আসতে চায় না। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা দ্রুত দুইজন শিক্ষক দেয়াতে সংকট কিছুটা লাঘব হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক জানান, বদ্ধ গেরামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে তিনি জানতেন না। সম্প্রতি শুনে দ্রুত দুইজন শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছেন। আরো একজন শিক্ষক দেয়া হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।