নয় ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীরা

top Banner

এম মাঈন উদ্দিন

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে উৎসবের বদলে ছিলো আৎকন্ঠা আর আতঙ্ক। উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কোন প্রার্থী না থাকলেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমাদানে দিনভর মারমুখী আচরণ করেছে সরকারদল সমর্থিতরা। বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে নিজেদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেক প্রার্থী নিজেদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেন নি।

রবিবার ১৭ অক্টেবর সকাল ৯টা থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিস, প্রাণি সম্পদ অফিস, পরিবার পরিকল্পনা অফিস, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও সমবায় অফিসে ৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এসময় শো-ডাউন ও মিছিল করতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের। সবচেয়ে বড় শোড়াউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন।

এদিকে রবিবার সন্ধ্যা টার নাগাদ মিরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট ৫ জন রিটানিং কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা গেছে, এখানকার ১৬ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ২৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ৯টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের সাথে কোন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকায় তারা একক ভাবে বিজয়ী হওয়ার পথে রয়েছেন। এখানকার খৈয়াছড়া এবং মিঠানালা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টি মনোনীত ২ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ১৬টি ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে মোট ১২৭ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৬০২ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রবিবার সকালে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম আবু তাহের ভূঁইয়া। এসময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের কর্মীরা তার থেকে মনোনয়ন পত্র কেড়ে নিতে চেয়েছিলো বলে তিনি দাবি করেছেন। তবে তিনি পরবর্তীতে নিজের মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এর আগের দিন গত শনিবার (১৬ অক্টোবর) ৯ নম্বর সদর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যান স্থানীয় কৃষক লীগের সভাপতি মেজবাউল আলম প্রকাশ ফারুক।

তবে মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফারুক হোছাইন বলেন, ‘অফিসের বাহিরে কোন ঘটনা ঘটলে আমরা কি করতে পারি। তবে তিনি যদি লিখিত অভিযোগ দিতেন তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’

রবিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১ নং করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. এনায়েত হোসেন, ২ নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. সোনা মিয়া ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইফতেখার উদ্দিন ভূঁইয়া, ৩ নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. রেজাউল করিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিন, ৪ নং ধুম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, ৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মফিজুল হক, ৬ নং ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মো. মোস্তফা, ৭ নং কাটাছরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী হুমায়ুন, ৮ নং দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত এস এম আবু সুফিয়ান, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অর্ণিবান চৌধুরী রাজিব, ৯ নং মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত শামছুল আলম দিদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাইফুল্লাহ দিদার, খায়রুল বাশার ফারুক, আজম উদ্দিন, ১০ নং মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত এম এ কাশেম, জাতীয় পার্টি মনোনীত নুর হোসাইন, স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ মাঈনুল হাসান, এসএম আবু তাহের ভূঁইয়া, ১১ নং মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার , ১২ নং খইয়াছড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহফুজুল হক জুনু, স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী, জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. নুরুন নবী, ১৩ নং মায়ানী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত কবির আহম্মদ নিজামী, ১৪ নং হাইতকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ফজলুল কবির ফিরোজ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আলা উদ্দিন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মনোনয়ন পত্র জমা দানে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মীদের বাধা এবং মারমুখী আচরণ নিয়ে কথা বলতে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী এবং পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে ফোন করলে তারা উভয়েই ফোন রিসিভ করেন নি।

আরো খবর