দেশের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য নেওয়ার জন্য স্থলপথের একমাত্র রুটে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি চলাচল করছে। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হলেও পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার ৩০ কিলোমিটার অংশে দখল ও বিভিন্ন অনিয়ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ধুমঘাট থেকে বড়দারোগাহাট পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়ম চোখে পড়লেও এসব ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্টো পথে যান চলাচল, যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা, মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে মাল বন্টন, গাড়ি পার্কিং করে মহাসড়ক দখল, যাত্রী ছাউনি দখল করে মাইক্রো ষ্ট্যান্ড, নিষিদ্ধ তিন চাকার যানবাহন সিএনজি অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, নাসিমন, করিমন মহাসড়কে দাপিয়ে চলছে। এছাড়া মহাসড়ক দখল করে ও ঘেঁষে রাখা হয়েছে ইট, বালু, কংক্রিট, গাছের টুকরো। এতে প্রতিনিয়ত সড়ক যেমন ধুলোবালিতে ভরে যায়, আবার যেকোন সময় স্লিপ হয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। এছাড়া সবচেয়ে বিপজ্জনক স্ক্র্যাপ লোহা বা ধারালো পণ্য গাড়িতে বহন করা। স্ক্র্যাপগুলো ঢেকে বা কনটেইনারের ভেতরে আনা নেয়ার নিয়ম থাকলেও সংম্লিষ্টরা তা মানছেন না। এতে গাড়ি ঝাঁকুনির সময় ওপর থেকে ধারালো লোহা সড়কে পড়ে তা নানাভাবে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কে প্রায়ই যানবাহনের চাকা ছিদ্র হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে গাড়ির চালক-হেলপার ও মালিকরা দেখেন অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ গাড়ির চাকায় ধারালো কিছু ঢুকে যাওয়া। গত শনিবার দুপুরে একটি যাত্রীবাহী বাস লক্ষীপুর থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে হাদিফকিরহাট এলাকায় হঠাৎ বিকট শব্দে মহাসড়কের পাশে দাঁড়ানো অন্য একটি কাভার্ডভ্যানকে ধাক্কা দেয়। এই সময়ে গাড়িতে থাকা যাত্রীরা আতংকিত হয়ে যান। পরে গাড়ি থেকে নেমে যাত্রী ও হেলপার দেখে গাড়ির সামনের চাকায় পেরেক ঢুকে চাকা পাংচার হয়ে যাওয়া এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই রকম দুর্ঘটনা অহরহ ঘটছে।
মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বারইয়ারহাট পৌর অংশে রিক্সা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং আর সড়কে যাত্রী উঠানামায় সবথেকে বেশি নাজেহাল অবস্থা। ঠাকুরদিঘী, মিঠাছড়া, সুফিয়া রোড, চিনকী আস্তানা, বড়তাকিয়া এলাকায় সব থেকে ভয়ানক উল্টো পথে গাড়ি চলাচল। হাদিফকিরহাট, নিজামপুর, সুফিয়া রোড় এলাকায় মহাসড়ক দখল করে বালুর স্তুপ রাখা হয়েছে। বারইয়ারহাটের উত্তর বাজারে গাছের দখলে পুরো সড়ক।
উল্টো পথে আসা প্রাইভেটকাল চালক নুরুল আলম মোল্লা বলেন, গাড়ির জন্য গ্যাস নিতে হবে। ইউটার্ন ৩ কিলোমিটার দুরে তাই বাধ্য হয়ে উল্টো পথে আসছেন। তবে এমনটি ঠিক নয় বলে স্বীকার করেন তিনি।
মোটরসাইকেল আরোহি ওসমান গনি বলেন, মহাসড়কের যেখানে-সেখানে লোকাল গাড়িগুলো হঠাৎ যাত্রী উঠানামা করায় অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বেশির ভাগ গাড়ি সিগন্যাল লাইট ছাড়াই চলাচল করে। লেগুনা, ফেইফ লাইনের গাড়িগুলোর চালকরা এ কাজটি বেশি করে থাকে। তাই সামনের গাড়ির গতিবিধি বুঝতে না পেরে অনেক গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মহাসড়কে দিন-রাত আমাদের টহল টিম দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে সড়কে প্রতিনিয়ত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ম করার কারণে গাড়ি আটক করে মামলাও হচ্ছে। কিন্তু চালকদের অসচেতনতার কারণে এসব অনিয়ম বন্ধ হচ্ছে না। সড়কে দখলের বিষয়ে তিনি বলেন, মহাসড়ক দখল-বেদখলের ব্যাপারটি সড়ক ও জনপদ বিভাগ দেখবে।