চলমান রিপোর্ট
বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালে বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র ইমপেরিয়াল হাসপাতাল অনন্য অবদান রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.রবিউল হোসেন।
২০ জুন (রবিবার) হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ২য় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে উক্ত সংবাদ সন্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন, চট্টগ্রাম আই ইনফার্মারি ও ট্রেনিং কমপ্লেক্সের চেয়ারম্যান ও ইমপেরিয়াল হাসপাতালের বোর্ড অফ ডিরেক্টর্স এর সিনিয়র সদস্য এম এ মালেক। উপস্থিত ছিলেন ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমজাদুল ফেরদৌস চৌধুরী।
হাসপাতালের একাডেমিক কোওর্ডিনেটর ডা. আরিফ উদ্দিন আহমেদ এর উপস্থাপনায় সংবাদ সন্মেলনে ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা.রবিউল হোসেন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০১৯ সালের ১৫ জুন চট্টগ্রামস্থ ৪০০ শয্যা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক মানের ইমপেরিয়াল হাসপাতাল যাত্রা শুরু করেছিল।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারনে পরিকল্পিত কর্মকান্ড অগ্রগতিতে শুরুতেই অনাকাঙ্খিতভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। অপরদিকে প্রশিক্ষিত ২০০ জন ডাক্তার ও দক্ষ নার্স সরকারি চাকুরীতে যোগদান করে। ইমপেরিয়াল হাসপাতাল এই সংকটময় পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে রোগীদের উন্নতমানের চিকিৎসার লক্ষে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্থাপনা- ২৫টি ক্রিটিকেল কেয়ার বেড এবং ২৫টি আইসোলেশন কেবিন বিশিষ্ট একটি সম্পূর্ণ আলাদা কোভিড ইউনিট স্থাপন করে। যেখানে ডাক্তার ও নার্স সমন্বয়ে গঠিত ৭০ জনের একটি টিম সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। চট্টগ্রাম শহরের বাইরে রোগীদের জন্য একটি মোবাইল টিমের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেমন- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সন্দীপ, উখিয়া, ভাসানচর থেকে করোনা সেম্পল গ্রহণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল একটি উলেখযোগ্য অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজিং ট্রাস্টি অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের প্রখ্যাত হার্ট সার্জন ডা. দেবী শেটির প্রতিষ্ঠিত নারায়ানা হেলথের ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান সমন্বয়ে গঠিত ৪০ জনের একটি টিম গত জানুয়ারী থেকে ইমপেরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে ২৬টি ওপেন হার্ট সার্জারী, ২৩৯টি বিভিন্ন রকম প্রসিডিউরসহ বর্হিবিভাগে ৭০০০ এর অধিক রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়েছে।
বাংলাদেশে শিশুদের প্রয়োজনের তূলনায় গুনগত মান সম্পন্ন চিকিৎসার প্রচুর ঘাটতি রয়েছে উলেখ করে অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, এই উপলদ্ধিকে সামনে রেখে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু রোগ বিভাগ স্থাপন করেছে। যেখানে ৪০ জনের টিমে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। এই ইউনিটে প্রি-মেচিউর (ওজন-৭০০-১০০০ গ্রাম), নবজাতকদের জন্য ১২টি আলাদা শয্যা রয়েছে।
বাংলাদেশে এই প্রথম নবজাতকদের জন্য ডেডিকেটেড এ্যাম্বুলেন্স-যেখানে ডেডিকেটেড মেডিকেল টিম ডাক্তার, নার্স, ভেন্টিলেটর সহ প্রয়োজনীয় লাইফ সাপোর্টের ব্যবস্থা রয়েছে। এই পর্যন্ত ২০০ এর অধিক এই ধরণের প্রি-মেচিউর শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এই ইউনিটে ”নিউবর্ণ স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম” এর মাধ্যমে জন্মগত ত্রুটি ও রোগ যেমন- হৃদযন্ত্র, হরমোন, হারজোড়া, চোখ, কানের জন্মগত ত্রুটি, নির্ণয়ের ব্যবস্থা রয়েছে, যা চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত ইমপেরিয়াল হাসপাতালই করে থাকে।
তিনি বলেন, ল্যাব মেডিসিন বিভাগ, বিশেষ করে ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে বায়োপসি ও হিস্টোপ্যাথোলজি বিভাগ অত্যন্ত সফলতার সাথে চট্টগ্রামে অনন্য হয়ে উঠেছে। এমনকি অপারেশন চলাকালীন তাৎকক্ষণিক ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য ফ্রোজেন সেকশানের ব্যবস্থা রয়েছে যা চট্টগ্রামে ইমপেরিয়াল হাসপাতালই করে থাকে।
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগে সর্বাধুনিক ডুয়েল সোর্স সিটি স্ক্যান মেশিনের মাধ্যমে হার্টের সিটি এনজিওগ্রাম ও ক্যালসিয়াম স্কোরিং এর মাধ্যমে কোন ব্যক্তির আগামী ৫ বছরে হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কার হার নির্ণয় করা যায়।
ইমপেরিয়াল হাসপাতালের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, এ বছরে শুরু হতে যাচ্ছে ‘চট্টগ্রাম ইমপেরিয়াল কলেজ অব নার্সিং’। এই ব্যাপারে যাবতীয় আয়োজন, বিভিন্ন প্রকারের অনুমতি, নার্সদের ইন-ক্যাম্পাসে থাকার ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে সড়ক দূর্ঘটনা ও অন্যান্য গুরুতর দূর্ঘটনার রোগীদের চিকিৎসা সম্মিলিত ভাবে একই হাসপাতালে করার তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকলেও ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ৫টি ডিসিপলিন যেমন জেনারেল সার্জারী, নিউরো সার্জারী, অর্থোপেডিক সার্জারী, প্লাস্টিক সার্জারী এবং ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল সার্জারীর সমন্বয়ে একটি টিম নিয়ে ”ট্রমা সেন্টার” গঠনের মাধ্যমে একই ছাদের নিচে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া ‘প্রিভেন্টিভ এন্ড ফ্যামিলি হেলথ কেয়ার’ এর মাধ্যমে পরিবারের সকল সদস্যদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিক্ষামূলক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন রোগ প্রাথমিক স্তরে নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান করার ব্যবস্থা থাকবে। দক্ষ মেডিকেল টেকনিকেল জনশক্তি তেরীর লক্ষে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল ভবিষ্যতে একটি স্বতন্ত্র প্রশিক্ষন কোর্স চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যাতে করে যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার শিক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় ও রোগীর পরিচর্যায় সহায়তা হবে।
ক্যান্সার ইন্সটিটিউট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন বলেন, ইমপেরিয়াল হাসপাতালের মূল পরিকল্পনায় ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা অন্যতম। বর্তমানে ইমপেরিয়ালে শুধু কেমোথেরাপীর মাধ্যমে সব বয়সের ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। কেমোথেরাপীর মাধ্যমে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যেমন ক্যামোথেরাপী ডে কেয়ার সেন্টার, অপারেশান থিয়েটার, ল্যাবরেটরী ও আনুষাঙ্গিক সাপোর্ট সার্ভিস এর ব্যবস্থা বর্তমানে ইমপেরিয়ালে বিদ্যমান। কিন্তু পুর্নাঙ্গ ক্যান্সার ইন্সটিটিউট গড়ে তুলতে আরো প্রায় একশত কোটি টাকা প্রয়োজন বিধায় এর কাজ আপাতত স্থগিত আছে। তবে পুর্নাঙ্গ ইনফার্টিলিটি সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু করোনা অতিমারির কারনে আপাতত তা শুরু করা হয়নি বলে তিনি জানান।